ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম। গ্রিন টি এর উপকারিতা

 

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম, গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ওজন-কমাতে-গ্রিন-টি-খাওয়ার-নিয়ম-ও-উপকারিতা

আপনি এই আর্টিকেলটি পুরো পড়লে গ্রিন টি কিভাবে তৈরি হয়, এটি কোথায়  পাওয়া যায়, এটির ব্র্যান্ড ও খাওয়ার সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা করি আপনি আর্টিকেলটি পুরো পড়লে গ্রিন টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচীপত্র: ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

গ্রীন টি কি ও কিভাবে তৈরি হয়

গ্রীন টি (Green Tea) হলো একটি প্রাকৃতিক পানীয় যা ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia sinensis) গাছের পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এটি চায়ের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় ধরন। অন্যান্য চায়ের তুলনায় গ্রীন টি কম প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যার ফলে এর অনেক প্রাকৃতিক উপাদান অক্ষুণ্ণ থাকে।

গ্রীন টি কিভাবে তৈরি হয়

গ্রীন টি তৈরি করার প্রক্রিয়া বেশ প্রাচীন এবং এটি চা পাতার স্বাভাবিক উপাদানগুলো ধরে রাখতে সাহায্য করে। গ্রীন টি সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে তৈরি করা হয়:

গ্রীন টি তৈরির প্রথম ধাপ হলো ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia sinensis) নামক চা গাছের তাজা পাতা সংগ্রহ করা। চা গাছের পাতা হাতে তুলে নেয়ার পরপরই দ্রুত শুকানো হয়, যাতে পাতা অক্সিডাইজ না হয় এবং সবুজ রং অক্ষুণ্ণ থাকে। শুকানোর জন্য পাতা গরম বাতাসের নিচে বা রোদে রাখা হয়। চায়ের পাতাগুলো হালকা বাষ্প দেওয়া হয়। এটি পাতার সবুজ রং ধরে রাখে এবং পাতা অক্সিডেশন হতে বাধা দেয়, যা কালো চায়ের ক্ষেত্রে হয়। বাষ্প দেওয়ার পর, চা পাতাগুলোকে হালকা করে রোলিং বা গোটানো হয়। এর ফলে পাতার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বাড়ে। পুনরায় পাতাগুলো শুকিয়ে ফাইনাল গ্রীন টি তৈরি করা হয়, যা প্যাকেট করা হয় বিক্রয়ের জন্য।

গ্রিন টি এর উপকারিতা

গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে এখন আলোচনা করব। গ্রীন টি স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia sinensis) গাছের পাতা থেকে তৈরি হয়, যা প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে, ফলে এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। নিচে গ্রীন টির কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

ওজন কমাতে সহায়তা করে: গ্রীন টি শরীরের বিপাক হার (Metabolism) বাড়ায়, যা ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক। এতে থাকা ক্যাটেচিন (Catechin) এবং ক্যাফেইন শরীরের ক্যালোরি বার্নের হার বাড়ায়। নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: গ্রীন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, বিশেষ করে ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (EGCG)। এটি শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর মুক্ত কণা (Free Radicals) থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক বলে অনেক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: গ্রীন টি খেলে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) এর মাত্রা কমে এবং HDL (ভালো কোলেস্টেরল) এর মাত্রা বাড়ে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়া, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক, যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়: গ্রীন টিতে থাকা ক্যাফেইন ও L-theanine মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। ক্যাফেইন স্নায়ু কোষকে উদ্দীপিত করে মনোযোগ বাড়ায়, আর L-theanine মানসিক প্রশান্তি দেয়।নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: গ্রীন টি রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।

ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারি: গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল রাখে। এটি ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে। গ্রীন টি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: এক সপ্তাহে পেটের মেদ বা চর্বি কমান ৭ টি উপায়ে।

হজমশক্তি উন্নত করে: গ্রীন টি হজমশক্তি বাড়াতে সহায়ক এবং পাকস্থলীর গ্যাস ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ পেটের সমস্যা কমায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা: গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পলিফেনল ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। বিশেষ করে, স্তন, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।

দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে: গ্রীন টিতে ক্যাটেচিন নামক উপাদান রয়েছে, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া কমায় এবং দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও কার্যকর।

স্ট্রেস ও মানসিক চাপ কমায়: গ্রীন টিতে থাকা L-theanine মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে শিথিল রাখতে এবং মানসিক প্রশান্তি দিতে সহায়তা করে।

অ্যান্টি-এজিং প্রভাব: গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে, যা বার্ধক্য রোধে সহায়ক। নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে ত্বক দীর্ঘ সময় ধরে তরুণ ও সতেজ থাকে।

গ্রীন টি শুধু ওজন কমাতে নয়, পুরো শরীরের জন্যই উপকারী। এটি নিয়মিত পান করলে শরীরের বিপাক হার বাড়ে, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং ত্বক ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয়। তবে অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই প্রতিদিন ২-৩ কাপের বেশী গ্রীন টি পান করা উচিত নয়।

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। ওজন কমাতে গ্রীন টি খাওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চললে আপনি ভালো ফলাফল পেতে পারেন। এখানে গ্রীন টি খাওয়ার সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

সঠিক সময়ে গ্রীন টি পান 

খাবারের আগে বা পরে: খাবারের ৩০ মিনিট আগে বা পরে গ্রীন টি পান করা উচিত। এটি বিপাক হার বাড়াতে এবং খাবারের ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে।

সকালে খালি পেটে নয়: অনেকেই খালি পেটে গ্রীন টি পান করেন, যা কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসিডিটি বা হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সকালের নাশতার পরে বা অন্য খাবারের পর গ্রীন টি পান করা উত্তম।

ওয়ার্কআউটের আগে: ব্যায়াম শুরুর ৩০ মিনিট আগে গ্রীন টি পান করলে শরীরের ফ্যাট দ্রুত বার্ন হয় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

পরিমিত গ্রীন টি পান: ওজন কমাতে দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রীন টি পান করাই যথেষ্ট। অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে ক্যাফেইন বা ট্যানিনের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকতে পারে।

চিনি বা মধু এড়িয়ে চলা: চিনি যোগ করবেন না: গ্রীন টিতে চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি যোগ না করাই ভালো, কারণ এটি গ্রীন টির ক্যালোরি কমানোর উপকারিতা নষ্ট করতে পারে।

মধু বা লেবু: যদি মিষ্টির প্রয়োজন হয়, তবে সামান্য মধু বা লেবুর রস যোগ করতে পারেন, তবে খেয়াল রাখবেন মধু সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।

ওজন-কমাতে-গ্রিন-টি-খাওয়ার-নিয়ম

সঠিক তাপমাত্রায় তৈরি করা: গ্রীন টি বেশি গরম পানি দিয়ে তৈরি করলে তেতো হয়ে যেতে পারে। ৮০-৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে চায়ের পাতা ভিজিয়ে রাখুন ২-৩ মিনিটের জন্য।

রাতের খাবারের পরে গ্রীন টি এড়িয়ে চলা: গ্রীন টিতে ক্যাফেইন থাকায় এটি ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে গ্রীন টি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে গ্রীন টি গ্রহণ করা: শুধু গ্রীন টি পান করলেই দ্রুত ওজন কমবে না। এর সঙ্গে ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন কমাতে গ্রীন টি নিয়মিত ও সঠিক উপায়ে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এটি কোনও "ম্যাজিক ড্রিংক" নয়, এর সঙ্গে ব্যালেন্সড ডায়েট ও শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।

ওজন কমাতে কোন গ্রিন টি বেশি উপকারি

ওজন কমাতে বিভিন্ন ধরনের গ্রীন টি পাওয়া যায়, তবে কিছু নির্দিষ্ট ধরন এবং উপাদানবিশিষ্ট গ্রীন টি বেশি উপকারি বলে বিবেচিত হয়। নিচে ওজন কমানোর জন্য উপযোগী কিছু গ্রীন টি প্রকার এবং তাদের উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

ম্যাচা গ্রীন টি (Matcha Green Tea): ম্যাচা হলো এক ধরনের বিশেষ গ্রীন টি, যেখানে পুরো চা পাতা গুঁড়ো করে পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর ফলে আপনি পুরো পাতার পুষ্টিগুণ পান। ম্যাচা গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষত ইপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (EGCG) থাকে, যা শরীরের ফ্যাট বার্নিং ক্ষমতা বাড়ায়। এটি বিপাকহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অন্য যেকোনো গ্রীন টির তুলনায় ম্যাচা টিতে ৩ গুণ বেশি ক্যাটেচিন থাকে, যা ওজন কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর।

সেনচা গ্রীন টি (Sencha Green Tea): সেনচা জাপানি গ্রীন টি যা তাজা পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এর স্বাদ হালকা এবং মৃদু। সেনচা গ্রীন টি ফ্যাট বার্ন করতে সহায়ক এবং বিপাকীয় কার্যক্রম উন্নত করে। এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সেনচা নিয়মিত পান করলে শরীরের ফ্যাট কমতে শুরু করে এবং এনার্জি লেভেল বাড়ে।

জৈব বা অর্গানিক গ্রীন টি (Organic Green Tea): অর্গানিক গ্রীন টিতে কোনো কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না, ফলে এটি আরও বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক। অর্গানিক গ্রীন টি শরীরের টক্সিন দূর করে, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। অর্গানিক গ্রীন টি শরীরের ফ্যাট ভাঙতে সহায়তা করে এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিকমুক্ত হওয়ায় এটি প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: আপেল সিডার ভিনেগারের কার্যকরী উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

গ্যাবা গ্রীন টি (GABA Green Tea): গ্যাবা গ্রীন টিতে বিশেষভাবে গামা-অ্যামিনো বুটরিক অ্যাসিড (GABA) থাকে, যা মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে রিল্যাক্স করে। গ্যাবা চা মানসিক চাপ কমিয়ে ওজন কমানোর সহায়ক হতে পারে, কারণ স্ট্রেস ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়ায়। স্ট্রেস-রিলেটেড ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়ক এবং ফ্যাট বার্ন করার প্রক্রিয়া সক্রিয় করে।

উলং গ্রীন টি (Oolong Green Tea): উলং চা আংশিকভাবে অক্সিডাইজ করা হয়, যা এর স্বাদ ও উপকারিতায় ভিন্নতা আনে। উলং চা বিপাক হার বাড়ায় এবং শরীরের ফ্যাট ভাঙার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত উলং গ্রীন টি পানে পেটের এবং শরীরের অন্যান্য অংশের জমে থাকা ফ্যাট দ্রুত হ্রাস পায়।

পু এরহ গ্রীন টি (Pu-erh Green Tea): এটি চায়নার এক ধরনের বিশেষ চা, যেটি গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। পু এরহ চা হজমশক্তি বাড়াতে এবং ফ্যাট ভাঙতে সহায়ক। এটি শরীরের মেদ কমাতে সহায়ক বলে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। পু এরহ গ্রীন টির নিয়মিত ব্যবহারে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ধীরে ধীরে কমে।

ওজন কমানোর জন্য ম্যাচা গ্রীন টি সবচেয়ে কার্যকর বিবেচিত হয়, তবে সেনচা, অর্গানিক, গ্যাবা, উলং এবং পু এরহ গ্রীন টি-ও কার্যকর। তবে ওজন কমাতে গ্রীন টির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম বজায় রাখা অপরিহার্য।

সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে গ্রীন টি খাওয়ার কিছু উপকারিতা থাকলেও এর কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। আসুন প্রথমে উপকারিতার দিকে নজর দেই:

মেটাবলিজম বৃদ্ধি: খালি পেটে গ্রীন টি পান করলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। এতে ফ্যাট বার্নের হার বাড়ে, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের শক্তি: গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্যাটেচিন (catechin), শরীরের টক্সিন বের করতে সহায়ক। খালি পেটে পান করলে শরীরের কোষগুলোতে দ্রুত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পৌঁছে যায় এবং এটি সেল রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে।

ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ: খালি পেটে গ্রীন টি খেলে ক্যালোরি বার্ন করার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয়, যা সারাদিনের খাদ্য গ্রহণের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: গ্রীন টিতে থাকা L-theanine নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মানসিক ফোকাস বাড়ায় এবং ক্যাফেইন এর মৃদু উপস্থিতি শরীর ও মনকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: ৭ দিনে মুখের কালো দাগ দূর করার কার্যকরী উপায়।

ডডিটক্সিফিকেশন : সকালে খালি পেটে গ্রীন টি পান শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়ক। এটি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে, যা শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে।

সতর্কতা:

যদিও খালি পেটে গ্রীন টি পান করার কিছু উপকারিতা আছে, তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:

অ্যাসিডিটি ও পেটের সমস্যা: খালি পেটে গ্রীন টি পানে অনেকে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। গ্রীন টিতে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান হজমের এনজাইমগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে যা অ্যাসিডিটি তৈরি করতে পারে।

বমি বমি ভাব: ট্যানিনের কারণে খালি পেটে গ্রীন টি পান করলে কিছু লোকের বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।

ঘুমের ব্যাঘাত: গ্রীন টিতে ক্যাফেইন আছে, যা খালি পেটে পান করলে কিছু লোকের ক্ষেত্রে উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

সঠিক পদ্ধতি: খালি পেটে গ্রীন টি পান করার পরিবর্তে, এক গ্লাস পানি পান করার পর বা হালকা নাশতার পর এটি পান করা ভালো। গ্রীন টি খাওয়ার সময় সঠিক মাত্রায় পানি ও খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা উচিত।

গ্রিন টি খাওয়ার সময়

গ্রীন টি খাওয়ার সঠিক সময় শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর উপকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন সময়ে গ্রীন টি খেলে তার ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। তবে কিছু সময় আছে, যখন গ্রীন টি খেলে সর্বাধিক উপকার পাওয়া যায়:

সকালে নাশতার পর: নাশতার পর গ্রীন টি খেলে আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় এবং সারাদিন শরীর বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে পারে। খালি পেটে না খেয়ে নাশতার পর গ্রীন টি খেলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকিও কমে। খালি পেটে গ্রীন টি খেলে অনেকের পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হতে পারে, তাই নাশতার পরে খাওয়াই উত্তম।

ওয়ার্কআউটের আগে বা পরে: ব্যায়াম শুরুর ৩০ মিনিট আগে গ্রীন টি খেলে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া দ্রুততর হয় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্কআউটের পরে গ্রীন টি খেলে শরীরের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন হতে থাকে।

দুপুরে খাবারের পর: দুপুরের খাবারের পর গ্রীন টি খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং খাবারের ফ্যাট ভেঙে তা শরীরে জমা হতে বাধা দেয়। এটি দুপুরে এনার্জি ড্রপের সময় সতেজতা বাড়াতেও সহায়তা করে।দুপুরের খাবারের পরপরই না খেয়ে ৩০-৪৫ মিনিট পরে খাওয়া উচিত, যাতে এটি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়।

আরো পড়ুন: রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার। পুদিনা পাতার উপকারিতা।

বিকালে বা অফিসের বিরতিতে: বিকালে কাজের ফাঁকে বা অফিসের বিরতিতে গ্রীন টি পান করলে মনোযোগ বাড়ে এবং ক্যাফেইনের হালকা উপস্থিতি ক্লান্তি দূর করে। এতে করে দিনের শেষভাগেও এনার্জি লেভেল ভালো থাকে।

রাতে ঘুমানোর অনেক আগে (সন্ধ্যায় বা রাতে):  রাতের খাবারের ৩০ মিনিট পরে গ্রীন টি খেলে খাবারের হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। তবে রাতে দেরিতে গ্রীন টি পান না করাই ভালো, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। রাতে দেরিতে গ্রীন টি পান করলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই ঘুমানোর কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগে এটি পান করা উচিত।

গ্রীন টি খাওয়ার সেরা সময়গুলো হলো নাশতার পর, ব্যায়ামের আগে বা পরে, দুপুরের খাবারের পরে এবং বিকেলের দিকে। তবে রাতে দেরি করে গ্রীন টি না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে ক্যাফেইন থাকে যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

গ্রিন টি এর অপকারিতা

যদিও গ্রীন টির অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে সেবন করলে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। নিচে গ্রীন টির কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা তুলে ধরা হলো:

অ্যাসিডিটি ও পেটের সমস্যা: গ্রীন টিতে থাকা ট্যানিন পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা পেটে ব্যথা, গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে গ্রীন টি খেলে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ঘুমের ব্যাঘাত: গ্রীন টিতে ক্যাফেইনের মৃদু মাত্রা থাকে। অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে ক্যাফেইন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ঘুমের সমস্যা, অনিদ্রা বা উদ্বেগ হতে পারে। রাতে দেরি করে গ্রীন টি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি: গ্রীন টিতে থাকা ট্যানিন খাদ্য থেকে আয়রনের শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যারা আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন বা রক্তশূন্যতা (anemia) আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক বা মাংস খাওয়ার আগে বা পরে গ্রীন টি পান না করাই ভালো।

গ্রিন-টি-এর-অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সমস্যা: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে এর ক্যাফেইন এবং ক্যাটেচিন উপাদান গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় দিনে ১-২ কাপের বেশি গ্রীন টি পান করা উচিত নয়। ফোলিক অ্যাসিড এর অভাব তৈরি করতে পারে, যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর।

হাড়ের ঘনত্ব কমাতে পারে: অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের ঘনত্ব কমাতে পারে। এটি হাড় ভঙ্গুর করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা): গ্রীন টির হালকা ডিউরেটিক প্রভাব থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পানি শূন্যতা এড়াতে গ্রীন টি পান করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।

যকৃতের সমস্যা: যদিও খুব বিরল, তবে অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যকৃতের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা গেছে।

ক্যাফেইনের কারণে উদ্বেগ বা অনিদ্রা: গ্রীন টিতে থাকা ক্যাফেইন উদ্বেগ, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। যারা ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো বেশি হতে পারে।

বমিভাব এবং মাথা ঘোরা: গ্রীন টিতে উচ্চমাত্রায় ক্যাটেচিন এবং ট্যানিন থাকে, যা অতিরিক্ত পান করলে বমিভাব বা মাথা ঘোরা সৃষ্টি করতে পারে।

অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করলে বিপাকের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে: গ্রীন টি অতিরিক্ত পান করলে এটি বিপাকের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন খুব বেশি ফ্যাট বার্ন হয়ে গেলে শরীরে এনার্জি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

গ্রীন টি কোথায় পাওয়া যায়

গ্রীন টি এখন বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য, এবং এটি পাওয়ার জন্য অনেক বিকল্প রয়েছে। কিছু প্রধান উৎস হলো:

সুপারমার্কেট ও গ্রোসারি স্টোর: সব ধরনের বড় এবং ছোট মুদিখানায় এখন গ্রীন টি পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডভেদে প্যাকেটজাত, ব্যাগ বা পাতার আকারে গ্রীন টি বিক্রি হয়।

অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম: অ্যামাজন, দারাজ, আলিবাবা, এবং অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে সহজেই গ্রীন টি কেনা যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং মানের গ্রীন টি অনলাইনে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: কাজু বাদামের উপকারিতা। জেনে নিন কাজু বাদামের ব্যবহার ও অপকারিতা।

বিশেষায়িত চা স্টোর: অনেক দোকান রয়েছে যারা শুধু চা বিক্রি করে। এসব দোকানে সাধারণত উন্নত মানের বা বিশেষ ধরনের গ্রীন টি পাওয়া যায়।

ফার্মেসি ও স্বাস্থ্য সচেতন দোকান: স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য বিশেষ করে ফার্মেসি বা স্বাস্থ্য পণ্য বিক্রি করে এমন দোকানগুলোতে গ্রীন টি পাওয়া যায়।

কিছু জনপ্রিয় গ্রীন টি ব্র্যান্ড

কিছু জনপ্রিয় গ্রিন টি এর ব্র্যান্ড এর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

Lipton: আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয়।

Tetley: বিভিন্ন স্বাদের গ্রীন টি পাওয়া যায়।

Organic India: জৈব চা বিক্রি করে।

Twinnings: ব্রিটিশ চা ব্র্যান্ড যা অনেক ধরনের গ্রীন টি সরবরাহ করে।

গ্রীন টি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় যা খুব সহজে বাজারে বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়। এটি তৈরি করার প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ, এবং এটি উপযুক্ত পদ্ধতিতে তৈরি হলে এর পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

0 লেখকের মতামত: ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জেনে খেলে এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে থাকে। গ্রীন টির অনেক উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত বা সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে তা কিছু অপকারিতা সৃষ্টি করতে পারে। দিনে ২-৩ কাপের বেশি গ্রীন টি পান না করাই ভালো। বিশেষ করে খালি পেটে, গর্ভাবস্থায়, এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে একসঙ্গে গ্রীন টি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। শরীরের জন্য সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে গ্রীন টি পান করলে এর উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। আমাদের আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url