শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে সেটা আমাদের নানা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের আজকের আর্টিকেলে কিকি কারণে ওজন বাড়ে ও কিভাবে ওজন কমানো যায় সেই সম্পর্কে আপনাদের জানাব।
শরীরের ওজন বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, বিশৃঙ্খল জীবন যাপনের কারনে আমাদের ওজন বেড়েই চলেছে। আজ আমরা আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কিভাবে কমাবো তা নিয়ে আলোচনা করব।
পোস্ট সূচীপত্র: শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
- শরীরের ওজন কি কি কারণে বাড়ে
- শরীরের ওজন বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয়
- শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
- শরীরের ওজন কত হওয়া উচিত
- শরীরের ওজন কমানোর ঔষধ
- শরীরের ওজন কমানোর ঔষধ সেবনে সতর্কতা
- শরীরের ওজন হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ
- লেখকের মতামত: শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
শরীরের ওজন কি কি কারণে বাড়ে
শরীরের ওজন বাড়ার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। নিচে কিছু প্রধান কারণ দেওয়া হলো:
অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ: প্রতিদিনের চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে শরীরে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি চর্বি হিসেবে জমা হয়, যা ওজন বাড়ায়।
অলস জীবনযাপন: শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। শরীর যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি পোড়াতে না পারে, তাহলে তা ফ্যাট হিসেবে জমা হয়।
জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাসের কারণে অনেক সময় শরীরের গঠন এবং ওজন বাড়ার প্রবণতা থাকতে পারে।
হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েডের সমস্যা (হাইপোথাইরয়ডিজম), পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS), বা কুশিং সিন্ড্রোমের মতো কিছু হরমোনজনিত সমস্যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণে অনেক সময় বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া, মানসিক চাপের কারণে শরীরে করটিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক।
আরো পড়ুন: বিচি কলার উপকারিতা জেনে নিন। বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, স্টেরয়েড, ইনসুলিন, ওজন বাড়াতে পারে।
ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধি করে।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিজমের ধীরগতি: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিপাক ক্রিয়া কমে যায়, ফলে ওজন বাড়তে থাকে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্ট ফুড, প্রসেস করা খাবার, চিনি ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে শরীরের ওজন দ্রুত বাড়ে।
শরীরের ওজন বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয়
শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় জানার আগে জানতে হবে শরীরের ওজন বেশি হলে কি সমস্যা হতে পারে। শরীরের ওজন বেশি হলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে কিছু প্রধান সমস্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ: অতিরিক্ত ওজনের কারণে রক্তনালীগুলোর ওপর চাপ বাড়ে, যা হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস: বেশি ওজন এবং স্থূলতা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
অস্থিসন্ধি ব্যথা (অস্টিওআর্থ্রাইটিস): অতিরিক্ত ওজন শরীরের হাড় ও জোড়ায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে হাঁটু ও কোমরের জোড়ায়, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণ হতে পারে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত (স্লিপ অ্যাপনিয়া): ওজন বেশি হলে শ্বাসনালীর আশেপাশে চর্বি জমা হয়, যা শ্বাসের সমস্যা তৈরি করে এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া (স্লিপ অ্যাপনিয়া) সমস্যা হতে পারে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি: অতিরিক্ত ওজনের কারণে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার, যেমন স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, গলব্লাডার ক্যান্সার এবং কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
হরমোনজনিত সমস্যা: ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: অতিরিক্ত ওজনের কারণে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে, যার ফলে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
পেটের চর্বি ও লিভারের সমস্যা: ওজন বেশি হলে পেটের চর্বি বেড়ে যায় এবং এর সঙ্গে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
হজমজনিত সমস্যা: অতিরিক্ত ওজনের কারণে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রিক, এবং হজমের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
এখন আমরা আলোচনা করবে শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় নিয়ে। শরীরের ওজন কমানোর জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে যা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ওজন কমানো সম্ভব হবে। নিচে ১০টি কার্যকরী উপায় উল্লেখ করা হলো:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা: খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি, ফল, প্রোটিন ও আঁশযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রসেসড খাবার, চিনি এবং অতিরিক্ত চর্বি এড়িয়ে চলতে হবে।
ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ: দৈনন্দিন ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে রাখতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, যেন শরীরে জমা চর্বি কমে।
নিয়মিত ব্যায়াম: ওজন কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম বা জিমে অনুশীলন করতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, বাদাম এবং শিম জাতীয় খাবার প্রোটিনের ভালো উৎস।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা। বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা: ঘুমের অভাব ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, কারণ এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য।
চিনি ও মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলা: মিষ্টি পানীয়, সফট ড্রিংক, এবং অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ক্যালরির প্রধান উৎস এবং ওজন বাড়াতে সহায্য করে থাকে।
আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ: আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, ওটস, বাদাম এবং শিম জাতীয় খাবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং পেটের চর্বি কমাতে কার্যকরী।
ধীরগতিতে খাবার খাওয়া: ধীরে ধীরে খাবার খেলে দ্রুত পেট ভরে এবং কম ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। দ্রুত খেলে অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়, যা ওজন বাড়ানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে স্ট্রেস কমাতে হবে।
শরীরের ওজন কত হওয়া উচিত
শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় জানার পর এখন আমরা জানব মানুষের শরীরের ওজন কত হওয়া উচিত। শরীরের ওজন কত হওয়া উচিত, তা নির্ভর করে ব্যক্তির উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক গঠনের উপর। সাধারণত, বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ব্যবহার করে ওজনের স্বাস্থ্যকর পরিসীমা নির্ধারণ করা হয়। BMI হলো শরীরের ওজন ও উচ্চতার একটি অনুপাত, যা নির্দেশ করে একজন ব্যক্তির ওজন তাদের উচ্চতার তুলনায় কতটা সঠিক বা অস্বাভাবিক।
BMI গণনার ফর্মুলা:
BMI = ওজন (কেজি)/উচ্চতা (মিটার)2
BMI অনুযায়ী ওজনের বিভাগ:
১৮.৫-এর কম: আন্ডারওয়েট (অতিরিক্ত কম ওজন)
১৮.৫ - ২৪.৯: স্বাভাবিক ওজন
২৫ - ২৯.৯: অতিরিক্ত ওজন
৩০-এর বেশি: স্থূলতা
উদাহরণ:
যদি কারো ওজন ৭০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৭ মিটার হয়, তাহলে তার BMI হবে:
BMI= ৭০/১.৭*১.৭ = ২৪.২২
এটি স্বাভাবিক ওজনের মধ্যে পড়ে।
তবে, BMI সব সময় সঠিকভাবে শরীরের ফ্যাটের পরিমাণ বা স্বাস্থ্যের অন্যান্য দিক নির্ধারণ করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাথলেটদের শরীরের মাংসপেশির কারণে BMI বেশি হতে পারে, তবে তাদের শরীরে চর্বি কম থাকে। তাই শরীরের ওজনের আদর্শ মান নির্ধারণ করতে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে বলে আমরা মনে করি।
শরীরের ওজন কমানোর ঔষধ
শরীরের ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, তবে এ ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বেশিরভাগ ওজন কমানোর ওষুধ শরীরের ক্ষুধা কমিয়ে বা মেটাবলিজম বাড়িয়ে কাজ করে। কিছু ওষুধ রয়েছে, যা শরীরে ফ্যাট শোষণ কমিয়ে দেয়। নিচে কিছু সাধারণভাবে ব্যবহৃত ওজন কমানোর ওষুধের নাম ও তাদের কার্যকারিতা উল্লেখ করা হলো:
অর্লিস্ট্যাট: এটি ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় ওষুধ। এটি খাদ্যের চর্বি শোষণ কমিয়ে দেয় এবং শরীরে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়। এর বেশ কিছু ব্র্যান্ড নাম রয়েছে, যেমন Xenical ও Alli। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: ডায়রিয়া, ফ্যাটযুক্ত মল।
লিরাগ্লুটাইড : এটি মূলত ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, তবে এটি ক্ষুধা কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি Saxenda নামে পরিচিত। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি, মাথা ঘোরা, ডায়রিয়া।
ফেনটারমিন : এটি ক্ষুধা দমনকারী একটি ওষুধ, যা শরীরের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।এটি সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্র্যান্ড নাম: Adipex-P, Lomaira। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, মাথাব্যথা।
ফেনটারমিন ও টোপিরামেট :এই দুটি ওষুধ একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যেখানে ফেনটারমিন ক্ষুধা কমায় এবং টোপিরামেট মস্তিষ্কের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। ব্র্যান্ড নাম: Qsymia। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মাথাব্যথা, মুখ শুকানো, ঘুমের সমস্যা।
নালট্রেক্সোন ও বুপ্রোপিয়ন : এই ওষুধ দুটি মস্তিষ্কের ক্ষুধা এবং পুরস্কার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। ব্র্যান্ড নাম: Contrave। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা।
সেমাগ্লুটাইড : এটি একটি ইনজেকশনযোগ্য ওষুধ, যা ক্ষুধা কমিয়ে দেয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ব্যবহৃত হয় এবং Wegovy নামে পরিচিত। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বমি, পেটব্যথা, মাথা ঘোরা।
শরীরের ওজন কমানোর ঔষধ সেবনে সতর্কতা
ওষুধের মাধ্যমে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। ওজন কমানোর ওষুধ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয় বরং জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি সেগুলি গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যাবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। উল্লেখ্য ওষুধ ছাড়াও, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকরী উপায়।
শরীরের ওজন হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ
শরীরের ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে, যার মধ্যে কিছু শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। নীচে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হলো:
থাইরয়েডের সমস্যা (হাইপারথাইরয়ডিজম): থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপন্ন করলে শরীরের মেটাবলিজম বেড়ে যায়, যার ফলে ওজন হঠাৎ কমে যেতে পারে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এবং উদ্বেগের মতো লক্ষণ থাকতে পারে।
ডায়াবেটিস: টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না বা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে শরীরের গ্লুকোজ সঠিকভাবে কাজে লাগতে পারে না এবং ওজন কমতে শুরু করে। অন্যান্য লক্ষণ: অতিরিক্ত পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, দুর্বলতা।
পুষ্টিহীনতা : যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া যায় বা সঠিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ না করা হয়, তখন শরীরের ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। পুষ্টির অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুন: কাজু বাদামের উপকারিতা। জেনে নিন কাজু বাদামের ব্যবহার ও অপকারিতা।
ক্যান্সার: কিছু ধরনের ক্যান্সার, যেমন পাকস্থলী, লিভার বা প্যানক্রিয়াস ক্যান্সার, শরীরের ওজন হঠাৎ কমানোর কারণ হতে পারে। ক্যান্সারের কারণে শরীরের মেটাবলিজম দ্রুত হয় এবং শরীরের ফ্যাট ও পেশী কমে যায়। অন্যান্য লক্ষণ: ক্লান্তি, অস্বাভাবিক ব্যথা, খাবারে অরুচি।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা: বিভিন্ন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, যেমন ক্রোনস ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ, অথবা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) এর কারণে শরীরের খাদ্য শোষণ প্রক্রিয়ায় বাধা আসে, যার ফলে ওজন কমে যেতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ): দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অথবা বিষণ্নতার কারণে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে, যার ফলে ওজন কমে যেতে পারে। এ সময় শারীরিক শক্তি কমে যায় এবং খাদ্য গ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে যায়।
ইনফেকশন বা সংক্রমণ: দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ, যেমন টিউবারকুলোসিস (TB), HIV/AIDS, বা প্যারাসাইটিক ইনফেকশন, শরীরের ওজন দ্রুত কমানোর কারণ হতে পারে। সংক্রমণের অন্যান্য লক্ষণ: জ্বর, ক্লান্তি, ঘাম, দুর্বলতা।
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD): দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্টের কারণে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ওজন কমে যেতে পারে।
হার্টের সমস্যা: হার্টের কার্যকারিতা কমে গেলে এবং শরীর পর্যাপ্ত রক্ত ও পুষ্টি সরবরাহ না পেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা ওজন কমার কারণ হতে পারে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন ক্যান্সার থেরাপি, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, বা অন্যান্য হরমোন সংশ্লিষ্ট ওষুধ, ক্ষুধা কমিয়ে ওজন হ্রাস করতে পারে।
লেখকের মতামত: শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায়
আমরা এতক্ষন শরীরের ওজন কমানোর কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করলাম। যদি কারো শরীরের ওজন হঠাৎ করে কমে যায় বা বেড়ে যায় এবং কোনো কারণ বোঝা না যায়, তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওজন কমার বা বাড়ার কারণ নির্ণয় করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।
ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url