কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে । ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম
কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। তা না জানার কারণে আমাদের অনেকেরই ইউরিক এসিড বেড়ে শারিরীক সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের আজকের আর্টিকেল ইউরিক এসিড নিয়ে।
ইউরিক এসিড শুধু খাবার নিয়ম মেনে খেলেই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার নিয়ম মাফিক ব্যায়াম। আমাদের আজকের আর্টিকেলে খাদ্যের নিয়মাবলীর সাথে সাথে ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম নিয়েও আলোচনা করা হবে।
পোস্ট সূচীপত্র: কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে
- ইউরিক এসিড কি
- ইউরিক এসিড কেন বাড়ে
- ইউরিক এসিড শরীরে বাড়ার লক্ষণ
- কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে
- ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম
- ইউরিক এসিড প্রতিরোধ করব কিভাবে
- লেখকের মতামত: কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে
ইউরিক এসিড কি
ইউরিক এসিড হলো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা শরীরে পিউরিন (purine) নামক যৌগের বিপাক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। পিউরিন হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান, যা বিভিন্ন খাবারে যেমন মাংস, মাছ, মটরশুঁটি এবং কিছু শাকসবজিতে পাওয়া যায়। শরীরের কোষগুলো যখন পিউরিনকে ভেঙে ফেলে, তখন ইউরিক এসিড উৎপন্ন হয়। সাধারণত ইউরিক এসিড রক্তে দ্রবীভূত হয় এবং কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে কখনও কখনও শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করবে কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে।
ইউরিক এসিড কেন বাড়ে
মানব দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার (হাইপারইউরিসেমিয়া) কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে। ইউরিক এসিড কেন বাড়ে এটা জানার পরেই আমরা জানতে চলেছি কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া: পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন লাল মাংস, যকৃত, কিডনি, সামুদ্রিক খাবার, মটরশুঁটি, মাশরুম, শিম) বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের উৎপাদন বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন: বিচি কলার উপকারিতা জেনে নিন। বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।
কিডনির সমস্যা: কিডনি সঠিকভাবে ইউরিক এসিডকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে না পারলে রক্তে এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিডনি ফাংশনে সমস্যা হলে ইউরিক এসিড জমে যায়।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, কারণ এটি বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
অ্যালকোহল সেবন: বিশেষ করে বিয়ার ও মদ বেশি খাওয়া ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। কারণ অ্যালকোহল শরীরের ইউরিক এসিড মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং এর নিঃসরণ কমায়।
মেটাবলিক সিন্ড্রোম: হাইপারটেনশন, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।
ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ, যেমন ডাইইউরেটিক বা পানি কমানোর ওষুধ, অ্যাসপিরিন এবং কিছু ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ ইউরিক এসিডের নিঃসরণ কমিয়ে রক্তে এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক প্রবণতাও ইউরিক এসিড বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি দেখা যায়।
ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা: শরীরে পানি কম থাকলে ইউরিক এসিডের নিঃসরণ কমে যেতে পারে, ফলে এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের কোষের ভাঙন: ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় (যেমন কেমোথেরাপি), কিছু কোষ দ্রুত ভেঙে যায় এবং পিউরিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ইউরিক এসিড উৎপাদন বাড়ায়।
এই কারণগুলোর মধ্যে কোনো একটি বা একাধিক কারণে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ইউরিক এসিড শরীরে বাড়ার লক্ষণ
কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে তা জানার আগে আপনাদের জানিয়ে দেয় এটা বেড়ে গেলে শারিরীক কি লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন যে এটা বেড়ে গেছে। ইউরিক এসিডের মাত্রা শরীরে বেড়ে গেলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলো সাধারণত তখনই দেখা যায় যখন ইউরিক এসিড অতিরিক্ত হয়ে গাউট বা কিডনির সমস্যার মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। নিচে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হলো:
গাঁটে ব্যথা ও ফোলা: ইউরিক এসিড বেশি হলে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো গাঁটের (joints) ব্যথা ও ফোলা। বিশেষত পায়ের বুড়ো আঙুলের গাঁট বেশি আক্রান্ত হয়, যাকে গাউট বলা হয়। গাঁটের চারপাশে তীব্র ব্যথা, লালচে বা উষ্ণ অনুভূতি হতে পারে। ব্যথাটি সাধারণত হঠাৎ শুরু হয় এবং রাতের বেলা বেশি হয়।
শরীরে ফোলা বা ইনফ্লেমেশন: গাঁটে স্ফীতি এবং তীব্র ব্যথা দেখা দেয়। আক্রান্ত স্থানে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং ফোলা অংশটি উজ্জ্বল লাল বা বেগুনি হয়ে যেতে পারে।
শক্ত হয়ে যাওয়া: গাউট আক্রমণের সময় গাঁটগুলোতে শক্ত হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে সকালে। হাত, পা, হাঁটু, বা কব্জির মতো স্থানে এই লক্ষণগুলি বেশি দেখা যায়।
কিডনির সমস্যা: বেশি ইউরিক এসিড কিডনিতে জমা হলে কিডনির পাথর হতে পারে। এর ফলে পেটে বা পাশে তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবে রক্ত এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে।
প্রস্রাবে সমস্যা: ইউরিক এসিড পাথরের কারণে প্রস্রাবের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রস্রাব করতে কষ্ট বা ব্যথা সৃষ্টি করে। অনেক সময় প্রস্রাবে পাথর তৈরি হতে পারে।
শরীরে ক্লান্তি বা অবসাদ: দীর্ঘমেয়াদী গাউট বা কিডনির সমস্যা শরীরে দুর্বলতা এবং ক্লান্তির অনুভূতি তৈরি করতে পারে। এতে শরীরে অস্বস্তি ও অবসাদ দেখা দিতে পারে।
প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং অস্বচ্ছতা: ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি হলে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং ঘন অস্বচ্ছ প্রস্রাব দেখা দিতে পারে, যা কিডনির সমস্যার লক্ষণ।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সাধারণত ইউরিক এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করতে হয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।
কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে/ইউরিক এসিডের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা
আমরা এখন আলোচনা করবে কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে। ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার ইউরিক এসিড বাড়ায়, তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। নিচে ইউরিক এসিড বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকা খাবারগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
লাল মাংস : গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস এবং অন্যান্য লাল মাংসে উচ্চমাত্রায় পিউরিন থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংস : যকৃত, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্রের মতো মাংসের অংশে প্রচুর পিউরিন থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে।
সামুদ্রিক খাবার : বিশেষত ঝিনুক, চিংড়ি, সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি, মেকরেল, টুনা, হেরিং এবং স্যামন এই ধরনের সামুদ্রিক খাবারে পিউরিনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা। বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।
অ্যালকোহল : বিশেষ করে বিয়ার এবং মদ ইউরিক এসিডের উৎপাদন বাড়ায় এবং এর শরীর থেকে বেরোনোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস : সালামি, সসেজ, পেপারোনি, হট ডগ ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত মাংসে উচ্চমাত্রায় পিউরিন এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ইউরিক এসিড বাড়াতে পারে।
চিনি এবং মিষ্টি পানীয় : ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ পানীয়, যেমন সফট ড্রিঙ্কস বা সোডা এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার (ক্যান্ডি, পেস্ট্রি, কেক) ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
মটরশুঁটি এবং শিম : শিম, মটরশুঁটি, এবং মসুর ডালের মতো লেগিউমে পিউরিনের কিছু মাত্রা থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে। যদিও এগুলোর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম, তবুও গাউটের সমস্যায় এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য : পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ, ঘি, পনির, ক্রিম ইত্যাদি ইউরিক এসিড বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কম চর্বিযুক্ত বা ফ্যাটমুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য ইউরিক এসিডের উপর তেমন প্রভাব ফেলে না।
অত্যধিক কফি : কফির অতিরিক্ত সেবনেও ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যদিও এটি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রভাবিত করে না।
মাশরুম এবং অ্যাস্পারাগাস : মাশরুম, অ্যাস্পারাগাস, পালং শাক, এবং ফুলকপির মতো সবজিতে মাঝারি থেকে উচ্চমাত্রায় পিউরিন থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে।
এই খাবারগুলো এড়িয়ে চললে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া, প্রচুর পানি পান করা এবং কম পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমানো যেতে পারে।
ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম
ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে এটি ইউরিক এসিড কমাতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। ব্যায়াম শরীরে বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং গাঁটের ব্যথা কমায়। এখানে ইউরিক এসিড কমানোর জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়াম এবং ব্যায়াম সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া হলো:
হাঁটা: ইউরিক এসিড কমানোর জন্য নিয়মিত হাঁটা একটি সহজ এবং কার্যকর ব্যায়াম। হাঁটা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা চেষ্টা করুন।
সাইক্লিং : সাইক্লিং একটি ভালো কার্ডিও ব্যায়াম, যা ওজন কমাতে এবং ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক। সপ্তাহে ৩-৫ দিন ৩০-৬০ মিনিটের জন্য সাইক্লিং করতে পারেন।
সাঁতার : সাঁতার একটি পূর্ণাঙ্গ শরীরের ব্যায়াম যা গাঁটের উপর চাপ না দিয়ে কার্যকরভাবে শরীরকে সক্রিয় করে রাখে। এটি গাউট বা গাঁটের ব্যথার রোগীদের জন্য আদর্শ। সপ্তাহে ২-৩ দিন সাঁতার কাটার চেষ্টা করুন।
ইয়োগা : ইয়োগা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করে। কিছু নির্দিষ্ট আসন ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিছু কার্যকর ইয়োগা আসন হল: ভুজঙ্গাসন (Cobra pose), উত্তানাসন (Standing forward bend) এবং পদ্মাসন (Lotus pose)। এগুলো গাঁটের ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
স্ট্রেচিং : নিয়মিত স্ট্রেচিং ব্যায়াম গাঁটগুলোকে নমনীয় রাখে এবং ব্যথা বা ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে ১০-১৫ মিনিটের জন্য স্ট্রেচিং করুন।
হালকা ওজন উত্তোলন : হালকা ওজনের ব্যায়াম পেশী শক্তিশালী করে এবং শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রথমে হালকা ওজন দিয়ে শুরু করুন এবং আস্তে আস্তে ওজন বাড়ান। সপ্তাহে ২-৩ দিন ২০-৩০ মিনিট ওজন নিয়ে কাজ করতে পারেন।
এ্যারোবিক্স : এ্যারোবিক্স ব্যায়াম শরীরে ক্যালরি খরচ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এ্যারোবিক্স ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী। সপ্তাহে ৩-৫ দিন ৩০-৬০ মিনিটের এ্যারোবিক্স ক্লাস বা ব্যায়াম অনুসরণ করতে পারেন।
ট্রেডমিল বা স্টেশনারি বাইক: যদি বাইরে হাঁটতে বা সাইক্লিং করতে না পারেন, তবে ট্রেডমিলে হাঁটা বা স্টেশনারি বাইক ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো নিয়মিত করার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক হয়। ব্যায়াম করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
ইউরিক এসিড প্রতিরোধ করব কিভাবে
ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং গাউট ও অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য কিছু জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন প্রয়োজন। ইউরিক এসিড প্রতিরোধের কিছু কার্যকর উপায় নিম্নে দেওয়া হলো:
পানি ও তরল পান করা: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল পান শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এছাড়াও, চিনি ছাড়া ফলের রস এবং হারবাল চা উপকারী হতে পারে।
লো-পিউরিন খাবার গ্রহণ: পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার ইউরিক এসিড বাড়ায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এড়িয়ে চলুন: লাল মাংস, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংস (যেমন লিভার, কিডনি), সামুদ্রিক খাবার (যেমন চিংড়ি, টুনা, সার্ডিন), এবং উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার। গ্রহণ করুন: শাকসবজি, বাদাম, দানা শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য (যেমন দুধ, দই) এবং ফলমূল।
আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা।
অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: বিশেষ করে বিয়ার এবং অ্যালকোহলিক পানীয়গুলি ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: অতিরিক্ত ওজন ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে এবং গাউটের ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং, নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না, কারণ এটি ইউরিক এসিড বাড়াতে পারে। বরং ধীরে ধীরে এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
প্রোটিনের সঠিক উৎস বেছে নিন: প্রাণীজ প্রোটিনের পরিবর্তে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন (যেমন মসুর ডাল, চিয়া বীজ, বাদাম) গ্রহণ করা উচিত। প্রাণীজ প্রোটিনে উচ্চ পিউরিন থাকে, যা ইউরিক এসিড বাড়ায়। চর্বিমুক্ত মুরগি বা মাছ মাঝারি পরিমাণে খেতে পারেন, তবে এটি নিয়মিত না করে সপ্তাহে ২-৩ দিন খাওয়া উচিত।
ফল ও শাকসবজি বেশি খান: বিশেষ করে চেরি, স্ট্রবেরি, আপেল এবং নাশপাতি ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, ব্রকলি, এবং ফুলকপি পিউরিনের মাত্রা কম থাকে এবং গাঁটের ফোলাভাব কমায়।
অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলুন: উচ্চ ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার এবং পানীয় যেমন সফট ড্রিঙ্ক, ক্যান্ডি এবং মিষ্টিজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন। ফ্রুকটোজ ইউরিক এসিড উৎপাদন বাড়াতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৪-৫ দিন ৩০-৬০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি গাঁটের উপর চাপ ফেলতে পারে।
স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপ এবং স্ট্রেস ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে। স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন: যদি আপনার ইউরিক এসিডের সমস্যা থাকে, তাহলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা এবং ওষুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়মিত চেক করুন এবং ওষুধ গ্রহণের সময়মতো অনুসরণ করুন।
প্রয়োজনীয় খাদ্যতালিকা মেনে চলুন: সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা উচিত। ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
লেখকের মতামত: কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে
আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে কি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে, ইউরিক এসিড কমানোর ব্যায়াম , ইউরিট এসিড প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। উপরোক্ত উপায়গুলো মেনে চললে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে এবং গাউট ও অন্যান্য ইউরিক এসিড সম্পর্কিত সমস্যার ঝুঁকি কমানো যাবে বলে আমরা মনে করি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সামান্য হলেও উপকারে আসবে। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।
ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url