ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ। ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায়

 

ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ সম্পর্কে আপনারা অনেকে জানতে চান। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় ও হোমিও ঔষধ সম্পর্কে জানতে চানা তাদের জন্য।

ইউরিক-এসিড-কমানোর-হোমিও-ঔষধ

ইউরিক এসিড হলো একটি মারাত্মক ব্যাধি। এটি শুরুতেই চিকিৎসা করা না হলে পরবর্তীতে জটিল হয়ে যায়। তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে ইউরিক এসিড ভালো করবেন সেসব ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্র: ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ

ইউরিক এসিড বেশি হলে কি হয়

ইউরিক এসিড শরীরে বেশি হলে সেটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ইউরিক এসিড শরীরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় যখন পুরিন নামক যৌগ ভেঙে যায়। পুরিন বিভিন্ন খাবার যেমন মাংস, মাছ, শুঁটকি, মাশরুম, মটরশুঁটি ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। যখন শরীর ইউরিক এসিড সঠিকভাবে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে পারে না, তখন এটি রক্তে জমা হতে শুরু করে এবং এর ফলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে:

গাউট: ইউরিক এসিড বেশি হলে শরীরে গাউট হতে পারে, যা একটি ধরনের আর্থ্রাইটিস বা গাঁটে ব্যথা। এটি সাধারণত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে শুরু হয়, কিন্তু শরীরের অন্যান্য গাঁটেও হতে পারে। গাউটের ফলে তীব্র ব্যথা, ফোলা, লালচে ভাব এবং সংক্রমণ হতে পারে।

আরো পড়ুন: পিপুল পাতা ও ফলের উপকারিতা। পিপুল পাতার ধর্মীয় গুরুত্ব।

কিডনির পাথর : রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি হলে এটি কিডনিতে জমা হয়ে পাথর তৈরি করতে পারে। কিডনির পাথর অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এবং প্রস্রাবে রক্তক্ষরণ, বমি বমি ভাব, এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।

কিডনি ফাংশন কমে যাওয়া: দীর্ঘমেয়াদে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা কিডনি ড্যামেজ বা কিডনি ফেলিওরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মেটাবলিক সিনড্রোম : উচ্চ ইউরিক এসিডের মাত্রা মেটাবলিক সিনড্রোমের সাথে সম্পর্কিত, যা ওজন বৃদ্ধি, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, উচ্চ রক্তচাপ, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রার নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রয়েছে যা বিভিন্ন উপায়ে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলোর ধরন মৃদু এবং প্রাকৃতিক। তাই ব্যবহার করা খুবই নিরাপদ। এগুলি ব্যবহার করাও সহজ, তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই এবং আপনি অল্প সময়ের মধ্যে ফলাফল দেখতে পাবেন। ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ এর সাতটি ঔষধ সম্পর্কে আপনাদের সামনে আমরা আলোচনা করি।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার নং 1: Natrum muriaticum.

Natrum muriaticum বিপাকীয় ব্যাধিগুলির সাথে যুক্ত ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রার চিকিৎসার জন্য একটি চমৎকার হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। এটি সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে তৈরি। এটি একটি লবণ যা সাধারণত মানবদেহে পাওয়া যায়। Natrum muriaticum একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, যার অর্থ এটি প্রস্রাবের আউটপুট বাড়ায়। বর্ধিত প্রস্রাব শরীর থেকে টক্সিন এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয় এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায়। ন্যাট্রাম মুরিয়াটিকাম গাউটের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের কারণে সৃষ্ট গেঁটেবাত জয়েন্টে ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং পায়ের আঙ্গুল এবং হাতে ফুলে যেতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার নং 2: কোলচিকাম

Colchicum autumnalis হল ইউরিক অ্যাসিডের জন্য একটি প্রাকৃতিক হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার। এটি শুকনো কোলচিকাম ফুল থেকে তৈরি করা হয়, যা প্রাচীনকাল থেকে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। Colchicum autumnalis হল একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক, যার অর্থ এটি উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে শরীরকে টক্সিন এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে। এটি উনবিংশ শতাব্দী থেকে প্রাকৃতিকভাবে গাউটের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার নং 3: বেনজোয়িক এসিড

Benzoicum acidum হল হোমিওপ্যাথিতে ইউরিক এসিডের চিকিৎসার জন্য একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। এটি বেনজোইক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়, যেটি কিছু বিয়ার, আপেল সিডার, স্যুরক্রট, দই, পনির, জেলি এবং আচার সহ অনেক খাবারের সংরক্ষণকারী ও প্রিজারভেটিভ বেশি পরিচিত। এছাড়াও অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য যেমন মাউথওয়াশ, শ্যাম্পু, সাবান এবং কিছু ডিওডোরেন্টেও এই বেনজোইক অ্যাসিড থাকে।

আরো পড়ুন: বিচি কলার উপকারিতা জেনে নিন। বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নম্বর 4: Redum Palstre

Redum palustre হল একটি প্রাকৃতিক হোমিওপ্যাথিক পাথেয় যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি ইউরোপ এবং এশিয়ার স্থানীয় বন্য গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের পাতা থেকে তৈরি করা হয়। এটি ইউরিক অ্যাসিড মাত্রা কমায় এবং গাউট উপসর্গ উপশম করে থাকে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার নম্বর 5: লাস টক্সিকোডেনড্রন

লাস টক্সিকোডেনড্রন ইউরিক অ্যাসিডের জন্য একটি প্রাকৃতিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। এটি উত্তর আমেরিকার স্থানীয় একটি বিষাক্ত গাছের ছাল থেকে তৈরি করা হয়। উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড, হাত ও পায়ে জয়েন্টে ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং ফোলাভাব সৃষ্টি ইত্যাদি কারণে এই লাস টক্সিকোডেনড্রন  ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রস টক্সিকোডেনড্রন একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক যা শরীর থেকে টক্সিন এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায়। এই মৃদু চিকিৎসা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নম্বর 6: সালফার

সালফার হল একটি প্রাকৃতিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ যা বিপাকীয় ব্যাধির কারণে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি খনিজ থেকে তৈরি হয় যা প্রাকৃতিকভাবে পাথর এবং মাটিতে পাওয়া যায়। সালফার হল একটি হালকা চিকিৎসা যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে। শিলা এবং পৃথিবী থেকে প্রাকৃতিক খনিজ থেকে তৈরি, এটি অ-বিষাক্ত এবং ব্যবহার করা খুব নিরাপদ।

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নম্বর 7: কালি কার্বনিকাম

কালি কার্বনিকাম হল একটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি গাউট, আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে ব্যথা, পেশী ব্যথা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায়  ব্যবহৃত হয়।  কিডনিতে পাথর, গেঁটেবাত বা ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি চমৎকার ঔষধ। ক্যালি কার্বোনিকাম বিভিন্ন গাছপালা এবং খনিজ পদার্থের ক্ষারীয় ছাই থেকে তৈরি করা হয়, যার মধ্যে গাঁদা, কালো পঙ্গপালের বীজ এবং খনিজ ক্যালামাইন রয়েছে।

ইউরিক এসিড কমানোর এ্যালোপ্যাথি ঔষধ সমূহ

আমরা এতক্ষন ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ নিয়ে আলোচনা করলাম। এখন আমরা এটি কমানোর এ্যালোপ্যাথি ঔষধ নিয়ে আলোচনা করব। ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে এবং গাউটের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসক সাধারণত রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং ইউরিক এসিডের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ওষুধের প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। ইউরিক এসিড কমানোর জন্য ব্যবহৃত প্রধান ঔষধসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

অ্যালোপুরিনল : অ্যালোপুরিনল হলো ইউরিক এসিড উৎপাদন কমানোর একটি ওষুধ। এটি পিউরিনের বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে, ফলে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমে। ব্র্যান্ড নাম: Zyloprim, Aloprim এটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং চিকিৎসক সাধারণত গাউটের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এ ওষুধ দেন।

ইউরিক-এসিড-কমানোর-এ্যালোপ্যাথি-ঔষধ

ফেবুক্সোস্ট্যাট :এটি একটি ইউরিক এসিড উৎপাদন কমানোর ওষুধ, যা অ্যালোপুরিনলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যাদের অ্যালোপুরিনল সহ্য করতে সমস্যা হয় বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাদের জন্য এটি কার্যকর হতে পারে। ব্র্যান্ড নাম: Uloric. এটি ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে এবং গাউট আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।

প্রোবেনেসিড : প্রোবেনেসিড কিডনিকে শরীর থেকে ইউরিক এসিড নির্গমন করতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ইউরিক এসিডের নির্গমন বাড়ায় এবং ইউরিক এসিড জমে থাকার ঝুঁকি কমায়। এটি দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

পেগলোটিকেস: এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং সাধারণত যাদের ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য ওষুধ কাজ করে না বা যাদের গাউট জটিল আকার ধারণ করে, তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্র্যান্ড নাম: Krystexxa. এটি ইউরিক এসিডকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে এবং দ্রুত রক্তের ইউরিক এসিডের মাত্রা কমায়।

কলচিসিন: কলচিসিন গাউট আক্রমণের সময় ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রতিরোধমূলক হিসেবে ব্যবহৃত হয় যাতে আক্রমণের সংখ্যা কম হয়। ব্র্যান্ড নাম: Colcrys, Mitigare.

এনএসএআইডি: নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) যেমন ইবুপ্রোফেন (Ibuprofen), ন্যাপ্রক্সেন (Naproxen) গাউট আক্রমণের সময় ব্যথা এবং ফোলা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি ইউরিক এসিড সরাসরি কমায় না, তবে গাউট আক্রমণের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কোর্টিকোস্টেরয়েড : প্রেডনিসোনের মতো কোর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ ব্যথা এবং ইনফ্ল্যামেশন কমায়। এটি গাউট আক্রমণের সময় দ্রুত উপশম প্রদান করে।সাধারণত ইনজেকশন বা ট্যাবলেট আকারে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহারের নির্দেশনা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ এবং সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন অ্যালোপুরিনল বা ফেবুক্সোস্ট্যাটের কারণে ত্বকের সমস্যা বা লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার জন্য রক্তের ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, ঔষধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ এবং জীবনযাপনের পরিবর্তন একসঙ্গে কার্যকর হয়।

ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায়

ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ  ও এ্যালোপ্যাথি ঔষধের আলোচনার পর এখন আমরা ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করব। ইউরিক এসিডের মাত্রা কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় কার্যকর হতে পারে। তবে, ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহারের আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এখানে ইউরিক এসিড কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলো:

প্রচুর পানি পান করুন: শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। পর্যাপ্ত পানি শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে এবং কিডনিকে ইউরিক এসিড সহজে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।

লেবুর রস: লেবুর রস শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।

আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের পিএইচ স্তর স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং ইউরিক এসিড কমাতে পারে। ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ২-৩ বার পান করতে পারেন। এটি ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

চেরি বা চেরি জুস: চেরি এবং চেরির রসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে এবং গাউটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন তাজা চেরি বা চেরি জুস পান করতে পারেন।

আরো পড়ুন: কাজু বাদামের উপকারিতা। জেনে নিন কাজু বাদামের ব্যবহার ও অপকারিতা।

আদা: আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গাঁটের ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে। এটি ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। প্রতিদিন এক কাপ আদা চা পান করতে পারেন। এছাড়া, আদার পেস্ট গাঁটে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে পারেন, যা গাউটের ব্যথা কমাতে পারে।

তুলসী পাতা: তুলসী পাতার নির্যাস ইউরিক এসিড কমাতে সহায়ক হতে পারে। তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরি করে প্রতিদিন ১-২ কাপ পান করতে পারেন।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এগুলো হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করতে সহায়ক। ওটস, দানা শস্য, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি, এবং বিভিন্ন ফলমূলে ফাইবারের ভালো উৎস পাওয়া যায়।

কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য: কম চর্বিযুক্ত দুধ, দই, এবং পনির ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক। এই পণ্যগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস এবং ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আলুর রস: আলুর রস শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কাঁচা আলুর রস বের করে প্রতিদিন সকালে পান করতে পারেন।

সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা: লো পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, দানা শস্য, বাদাম, এবং ফলমুল খাওয়া উচিত। এতে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অ্যালকোহল এবং উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা: অ্যালকোহল (বিশেষ করে বিয়ার) এবং পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংস, এবং সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ায়।

অলিভ অয়েল: রান্নার সময় স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মাখনের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো, কারণ এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ এর পাশাপাশি এই ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ইউরিক এসিড কমানোর ডায়েট চার্ট

ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। একটি ইউরিক এসিড কমানোর ডায়েট চার্টে এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে যা পিউরিনের মাত্রা কম এবং কিডনিকে ইউরিক এসিড শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। নিচে একটি সুষম ডায়েট চার্ট দেওয়া হলো যা ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে:

সকালের নাস্তা: 

  • ফল: একটি আপেল বা নাশপাতি (লো-পিউরিন ফল)
  • ওটস: দুধ বা পানিতে তৈরি করা (অল্প মধু দিয়ে মিষ্টি করতে পারেন)
  • গ্রিন টি: চিনি ছাড়া

সকালের মাঝের খাবার (স্ন্যাকস):

  • বাদাম: কিছু কাঠবাদাম বা আখরোট
  • তাজা ফলের রস: কমলার রস বা পেয়ারার রস (চিনি ছাড়া)
  • দই: ফ্যাটমুক্ত বা লো ফ্যাট দই
    ইউরিক-এসিড-কমানোর-ডায়েট-চার্ট

মধ্যাহ্নভোজন (লাঞ্চ):

  • বাদামি চালের ভাত: বা কোয়িনোয়া
  • সবজি: যেকোনো সবুজ সবজি (পালং শাক, ব্রকলি, ফুলকপি, গাজর) ভাজা বা সিদ্ধ
  • চিকেন বা মাছ (মাঝারি পরিমাণ): তন্দুরি বা গ্রিল করা চিকেন/মাছ (প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে ২-৩ দিন)
  • ডাল: মুগ ডাল বা মসুর ডাল

বিকালের খাবার (স্ন্যাকস):

  • শাকসবজির সালাদ: টমেটো, শসা, গাজর, লেটুস পাতা ইত্যাদি
  • আখরোট/বাদাম: কিছু পরিমাণ
  • তাজা ফল: আপেল, পেঁপে বা কলা

রাতের খাবার (ডিনার):

  • ফুলকপি বা মিক্সড সবজি: ভাপে সিদ্ধ বা সামান্য তেলে ভাজা
  • চিকেন স্যুপ বা সবজি স্যুপ: ফ্যাটমুক্ত করে রান্না করা
  • রুটি: গমের রুটি বা চূর্ণ গমের রুটি
  • দই: ফ্যাটমুক্ত বা কম চর্বিযুক্ত দই

লেখকের মতামত: ইউরিক এসিড কমানোর হোমিও ঔষধ

শরীরে উচ্চমাত্রায় ইউরিক এসিড রক্তে জমে গিয়ে গাউট (gout) নামক রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা মূলত অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং লালচে ভাব সৃষ্টি করে। কিডনিতে পাথর বা ক্যালকুলাই (uric acid stones) হতে পারে। ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের উপায় সমূহের মধ্যে পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া, যেমন লাল মাংস, সমুদ্রজাতীয় খাবার, এবং অ্যালকোহল। পর্যাপ্ত পানি পান করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা। উচ্চ ইউরিক এসিডের কারণে কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ইত্যাদি। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url