গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত তা নিয়ে আমাদের গর্ভবতী মায়েরা সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবেনা এই সম্পর্কে যারা জানতে চান আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য।

গর্ভাবস্থায়-কোন-কোন-খাবার-খাওয়া-উচিত

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই সময়ে কিছু খাবার আছে যেগুলো খেতে বলেন, কিছু খাবার আছে কম খেতে বলেন এবং কিছু খাবার আছে যা খেতে নিষেধ করেন। আমরা আজকে সেই সকল খাবারের তালিকা নিয়ে আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্র: গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থার পরিচিতি

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত তা নিয়ে জানানোর আগে গর্ভাবস্থা সম্পর্কে ধারনা দেই। গর্ভাবস্থা হলো সেই শারীরিক অবস্থা যেখানে একজন নারী তার গর্ভে একটি বা একাধিক ভ্রূণ বা ভ্রূণবীজ ধারণ করেন। এটি মানব প্রজনন প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ এবং সাধারণত প্রায় ৯ মাস বা ৪০ সপ্তাহ স্থায়ী হয়, যা তিনটি প্রধান পর্যায়ে (ত্ৰৈমাসিক) বিভক্ত করা যায়।

গর্ভাবস্থার স্তরসমূহ

প্রথম ত্রৈমাসিক (০-১২ সপ্তাহ): এটি গর্ভাবস্থার শুরু পর্যায়, যেখানে ভ্রূণের বিকাশ শুরু হয়। ভ্রূণের হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তৈরি হতে শুরু করে। নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে গর্ভবতী নারী ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, এবং স্তনের কোমলতা অনুভব করতে পারেন।

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ): এই পর্যায়ে ভ্রূণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এবং এটি প্রায় সম্পূর্ণ মানব আকারের হতে শুরু করে। ভ্রূণের হাড়, পেশী, এবং ত্বক দৃঢ় হয় এবং মায়ের পেটের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। সাধারণত এই সময়ে নারী কিছুটা স্বস্তি অনুভব করতে পারেন, কারণ প্রথম ত্রৈমাসিকের ক্লান্তি ও বমিভাব হ্রাস পায়।

আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ): এই পর্যায়ে ভ্রূণ সম্পূর্ণরূপে উন্নত হয় এবং প্রসবের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। মায়ের ওজন বৃদ্ধি এবং শারীরিক চাপ বাড়ে, যা কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে। ভ্রূণ তার অবস্থান পরিবর্তন করে নিচের দিকে চলে আসে, যা প্রসবের প্রস্তুতির লক্ষণ।

গর্ভাবস্থার লক্ষণসমূহ:

  • মাসিক বন্ধ হওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া (বিশেষত সকালে)
  • স্তনের কোমলতা এবং ফুলে যাওয়া
  • ক্লান্তি এবং ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

গর্ভাবস্থার সময় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সহায়ক। ডাক্তার বা ধাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করা, সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং ব্যায়াম করা গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন ভিটামিন কি পরিমানে শরীরে দরকার 

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত সেটা আলোচনার আগে আমাদের শরীরে কোন ভিটামিন কি পরিমানে দরকার এবং কোথায় পাওয়া যাবে সে বিষয়ে এখন আলোচনা করব। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশ এবং মায়ের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। এগুলো ভ্রূণের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। নিচে গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় কিছু প্রধান ভিটামিন এবং প্রতিদিনের সুপারিশকৃত পরিমাণের তালিকা দেওয়া হলো:

ক্রমিক পুষ্টিগুনের নাম প্রতিদিন শরীরে চাহিদা পুষ্টিগুনের উৎস
ফোলিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৯) ৬০০ মাইক্রোগ্রাম সবুজ শাক-সবজি, বাঁধাকপি, কমলা, ডাল ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন ডি ৬০০ আইইউ সূর্যালোক, ফ্যাটি মাছ, ডিমের কুসুম, দুগ্ধজাত খাবার
ভিটামিন সি ৮৫ মিলিগ্রাম কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রকলি।
ভিটামিন এ ৭৭০ মাইক্রোগ্রাম গাজর, মিষ্টি আলু,পালং শাক, ডিম।
ভিটামিন বি৬ ১.৯ মিলিগ্রাম কলা, আলু, মুরগীর মাংস, বাদাম, শস্যদানা।
ভিটামিন বি১২ ২.৬ মাইক্রোগ্রাম মাছ, ডিম, দুধ, মাংস ও ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার।
ভিটামিন ই ১৫ মিলিগ্রাম বাদাম, বীজ, সবুজ শাক-সবজি, উদ্ভিজ তেল।
ভিটামিন কে ৯০ মাইক্রোগ্রাম ব্রকোলি, পালং শাক, সবুজ শাক-সবজি, বাঁধাকপি।
ক্যালসিয়াম ১০০০ মিলিগ্রাম দুধ, চিজ, দই, শাক-সবজি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
১০ আয়রন ২৭ মিলিগ্রাম মাংস, ডাল, পালং শাক, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার।
১১ ম্যাগনেসিয়াম ৩৫০-৩৬০ মিলিগ্রাম বাদাম, বীজ, শাক-সবজি, ডাল।
১২ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম ফ্যাটি মাছ, আখরোট, চিয়া বীজ, ফ্যাক্সসিড।

এই ভিটামিন এবং মিনারেলগুলো গর্ভাবস্থায় মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত সেসব জিনিসের মধ্যে প্রথমেই আসে কিছু সবজির নাম। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর সবজি খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো মায়ের এবং ভ্রূণের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার সরবরাহ করে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সবজি রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত:

পাতা সবজি: শাক-সবজি (পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক): এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট (ভিটামিন বি৯) থাকে, যা ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পালং শাকে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা রক্তের লোহিত কণিকা এবং হাড়ের সুস্থতার জন্য উপকারী।

আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় চেরি ফল: চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।

ব্রোকলি: ব্রোকলিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফোলেট, এবং ফাইবার থাকে। এটি ভ্রূণের হাড় গঠনে সহায়ক এবং মায়ের জন্য হজমে উপকারি।

গাজর: গাজরে ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন) প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা ভ্রূণের চোখের বিকাশ এবং ইমিউন সিস্টেমের গঠনে সহায়ক।

মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ, ফাইবার, এবং পটাশিয়াম থাকে। এটি গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়ক এবং ভ্রূণের কোষ ও অঙ্গের গঠনকে উন্নত করে।

টমেটো: টমেটোতে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোষের সুরক্ষায় সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি থাকে, যা লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সহায়ক।

বেগুন: বেগুনে আয়রন ও ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

মুলো: মুলোতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে, যা হাড় এবং দাঁতের সুস্থতার জন্য উপকারী এবং ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে।

লাউ: লাউ (মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া) হালকা, সহজপাচ্য এবং প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার যুক্ত, যা গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে এবং হজমে সহায়তা করে।

বিট: বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

ফুলকপি ও বাঁধাকপি: এই সবজিতে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, এবং ফাইবার থাকে, যা ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে এবং ভ্রূণের বিকাশে সহায়ক হয়।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন ফল খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত সেসবের তালিকার সবজির পরে আসে কিছু ফলমূলের নাম। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর ফল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ফল প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার সরবরাহ করে যা মায়ের এবং ভ্রূণের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এখানে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য কিছু উপকারী ফলের তালিকা দেওয়া হলো:

কলা: কলাতে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ থাকে, যা বমিভাব এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

আপেল: আপেল ভিটামিন সি, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি হজমে সহায়তা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত আপেল খেলে শিশুর ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমে।

কমলা: কমলা একটি উৎকৃষ্ট ভিটামিন সি এর উৎস। এটি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়ায় এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করে। এছাড়া এতে ফোলেট থাকে, যা ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক।

আম: আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এটি ভ্রূণের কোষের বিকাশে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকতে পারে।

নাশপাতি: নাশপাতিতে ফাইবার, পটাশিয়াম, এবং ফোলেট রয়েছে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক এবং গর্ভাবস্থায় হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা ভালো রাখে।

বেদানা: বেদানাতে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন কে, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সহায়ক এবং ভ্রূণের হাড় ও রক্তের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

কিউই: কিউইতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং ফোলেট প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ভ্রূণের শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

তরমুজ: তরমুজে প্রচুর পানি, ভিটামিন সি, এবং পটাশিয়াম রয়েছে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পেশির খিঁচুনি প্রতিরোধ করে। এটি মায়ের পেটের চাপ কমাতেও সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায়-কোন-কোন-ফল-খাওয়া-উচিত

স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি, ফোলেট, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি গর্ভাবস্থার ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

আঙুর: আঙুরে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং ফোলেট থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

পেঁপে (পাকা): পাকা পেঁপেতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, এবং ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়ক এবং ত্বকের সুস্থতার জন্য উপকারী। তবে কাঁচা পেঁপে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে প্যাপাইন থাকে যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে।

ব্লুবেরি: ব্লুবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এতে ভিটামিন সি ও ফাইবার রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমের সমস্যাগুলো দূর করে।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খাওয়া উচিত নয়

গর্ভাবস্থায় কিছু সবজি এমন রয়েছে যেগুলো খেলে মায়ের বা ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে যদি সেগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত বা রান্না না করা হয়। এখানে কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া এড়ানো উচিত বা সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত:

কাঁচা বা আধা সিদ্ধ সবজি: ব্রোকলি, বাঁধাকপি, পালং শাক, মুলা: কাঁচা বা সঠিকভাবে রান্না না করা সবজি খাওয়া বিপদজনক হতে পারে, কারণ এগুলোতে বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থাকতে পারে যা গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে এবং সঠিকভাবে রান্না করা উচিত।

কাঁচা স্প্রাউট (অঙ্কুরিত বীজ): মুগ ডাল, মসুর ডাল, এবং অন্যান্য স্প্রাউট: অঙ্কুরিত বীজে সালমোনেলা বা ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকার ঝুঁকি বেশি। গর্ভাবস্থায় এটি পেটের সংক্রমণের কারণ হতে পারে, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যদি স্প্রাউট খেতে হয়, তবে তা অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।

কাঁচা পেঁপে: কাঁচা পেঁপেতে প্যাপাইন নামক একটি এনজাইম থাকে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কাঁচা পেঁপে গর্ভাবস্থায় একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে, কারণ এতে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে।

কাঁচা আলু: কাঁচা বা সবুজ আলুতে সলানিন নামক বিষাক্ত যৌগ থাকতে পারে, যা পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে এবং মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই আলু সবসময় ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।

বেগুন: বেগুনে প্রাকৃতিকভাবে কিছু ফাইটোহরমোন থাকে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। বিশেষত যেসব নারীর গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি বা জটিলতা আছে, তাদের বেগুন খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। তবে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে, বেগুন কখনো কখনো খাওয়া যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা।

আধা সিদ্ধ বা কাঁচা গাজর ও বিট: আধা সিদ্ধ বা কাঁচা অবস্থায় এইসব সবজি খেলে পেটের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় সঠিকভাবে সিদ্ধ করা বা ভাপে রান্না করা সবজি খাওয়া উচিত।

মাশরুম (বন্য মাশরুম): কিছু বন্য মাশরুম বিষাক্ত হতে পারে এবং তা গর্ভাবস্থায় খেলে বিপদজনক হতে পারে। কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত এবং নিরাপদ মাশরুম খাওয়া যেতে পারে, তবে বন্য মাশরুম এড়িয়ে চলা উচিত।

অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও গ্যাস সৃষ্টি করে এমন সবজি: পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি: এই সবজিগুলো অতিরিক্ত মশলাযুক্ত হলে গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় অস্বস্তি ও বদহজমের কারণ হতে পারে।

ফেনেল (মৌরি) এবং মেথি পাতা: ফেনেল এবং মেথি পাতা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে এবং প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় বিপদজনক হতে পারে। সুতরাং, এই সবজিগুলো গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন  ফল খাওয়া উচিত নয়

গর্ভাবস্থায় কিছু ফল আছে যেগুলো খেলে মা ও ভ্রূণের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এগুলো খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন, কারণ কিছু খাবার জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বা হজমে সমস্যা করতে পারে। নিচে গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয় এমন ফলের তালিকা দেওয়া হলো:

আনারস: আনারসে ব্রোমেলিন নামক এনজাইম থাকে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বিশেষ করে প্রথম তিনমাসে আনারস খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

কাঁচা পেঁপে (আবার উল্লেখযোগ্য): কাঁচা পেঁপে যেমন জরায়ুর সংকোচন ঘটায়, তেমনই এতে থাকা প্যাপাইন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে, তবে কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে চলা উচিত।

আঙুর: গর্ভাবস্থায় আঙুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত, কারণ আঙুরে থাকা রেসভেরাট্রল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বিশেষ করে কালো আঙুর এড়িয়ে চলা ভালো, কারণ এতে রাসায়নিক প্রভাব বেশি থাকে।

আরো পড়ুন: কাজু বাদামের উপকারিতা। জেনে নিন কাজু বাদামের ব্যবহার ও অপকারিতা।

লিচু: লিচুতে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে এবং এর ফলে রক্তের শর্করা বেড়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশি লিচু খেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তরমুজ (অতিরিক্ত পরিমাণে): তরমুজ শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। তবে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি বের হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, যদি তরমুজ দীর্ঘ সময় বাইরে রেখে খাওয়া হয়, তাহলে এতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।

ডুরিয়ান: ডুরিয়ান ফলের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি খেলে গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি এবং রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সৃষ্টি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন মাছ খাওয়া উচিত ও অনুচিত

গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত সেসবের তালিকায় সবজি ও ফলমূলের পরে আসে মাছের তালিকা। গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, কারণ এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন ডি, এবং আয়োডিন পাওয়া যায়। তবে কিছু মাছ আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে পারদ (মার্কারি) বা অন্যান্য দূষিত পদার্থের উচ্চ মাত্রা থাকতে পারে, যা ভ্রূণের বিকাশের ক্ষতি করতে পারে।

খাওয়া উচিত এমন মাছ

গর্ভাবস্থায় নিম্নোক্ত মাছগুলো খাওয়া নিরাপদ এবং পুষ্টিকর। এই মাছগুলোতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।

স্যামন: স্যামন মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনের চমৎকার উৎস। এতে পারদের মাত্রা কম থাকে, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ।

সার্ডিন: সার্ডিনও ওমেগা-৩ এবং ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এতে কম পারদ থাকে এবং গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।

ট্রাউট: ট্রাউট মাছে ওমেগা-৩ এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় মায়ের ও ভ্রূণের জন্য উপকারী।

হিলশা (ইলিশ): ইলিশ মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো, কারণ কিছু ইলিশে সামান্য পরিমাণ পারদ থাকতে পারে।

মাছের ডিম: মাছের ডিম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য পুষ্টির চমৎকার উৎস। তবে এটি অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।

আরো পড়ুন: নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা। নিমপাতা ব্যবহারের নিয়ম।

ক্যাটফিশ: ক্যাটফিশ কম পারদযুক্ত এবং প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি মাছ, যা গর্ভাবস্থায় নিরাপদ।

খাওয়া উচিত নয় এমন মাছ

গর্ভাবস্থায় কিছু মাছ খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে উচ্চ মাত্রায় পারদ বা অন্যান্য দূষিত পদার্থ থাকে, যা ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

শার্ক (হাঙ্গর): হাঙ্গর মাছে পারদের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

সোর্ডফিশ: সোর্ডফিশেও পারদের মাত্রা বেশি থাকে। এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়।

কিং ম্যাকেরেল: কিং ম্যাকেরেল একটি উচ্চ পারদযুক্ত মাছ। এটি ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে ক্ষতি করতে পারে।

টাইলফিশ : এই মাছটি অত্যন্ত উচ্চ পারদযুক্ত। গর্ভাবস্থায় এটি এড়িয়ে চলা উচিত।

বিগ-আই টুনা: বড় আকৃতির টুনাতে অনেক বেশি পারদ থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় এই জাতীয় টুনা মাছ এড়িয়ে চলা উচিত। তবে হালকা টুনা (canned light tuna) কম পারদযুক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে (সপ্তাহে ১-২ বার)।

সামুদ্রিক বন্য মাছ (বড় আকৃতির মাছ): সামুদ্রিক বড় মাছ যেমন হালিবুট, স্প্যানিশ ম্যাকেরেল ইত্যাদির মধ্যে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। এসব মাছ গর্ভাবস্থায় খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া উচিত হবে কি

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং বেশ উপকারী হতে পারে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করতে এবং ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে। তবে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:

লেবু খাওয়ার উপকারিতা গর্ভাবস্থায়

  • বমি বমি ভাব কমাতে: লেবুর গন্ধ এবং স্বাদ গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব (মর্নিং সিকনেস) কমাতে সাহায্য করে। লেবুর রস বা গন্ধ শুঁকলে অনেকের বমির ভাব কমে।
  • ভিটামিন সি-এর উৎস: লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হজমে সাহায্য করে: লেবু পানি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পেটের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় সাধারণ সমস্যা।
  • ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ: লেবু পানি বা লেবুর শরবত শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্কতা

  • অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি: লেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে, যা বেশি খেলে কিছু মায়ের পেটের অ্যাসিডিটি বা হার্টবার্ন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যদি এমন লক্ষণ দেখা দেয়, তবে লেবু খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
  • দাঁতের ক্ষয়: লেবুর অতিরিক্ত রস দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে পারে, তাই লেবু খাওয়ার পরে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া ভালো।

গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ খাবার সমূহ

গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার এবং পানীয় নিষিদ্ধ বা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো মা এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই খাবারগুলো সংক্রমণ, অ্যালার্জি, বা ভ্রূণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। নিচে গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:

কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাছ এবং মাংস: সুশি, সাশিমি, কাঁচা ঝিনুক এবং অন্যান্য কাঁচা সামুদ্রিক খাবারগুলিতে ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থাকতে পারে, যা গর্ভবতী নারীর জন্য সংক্রমণ এবং খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংসও বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এতে টক্সোপ্লাজমোসিস বা সালমোনেলা সংক্রমণ হতে পারে, যা ভ্রূণের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ ডিম: কাঁচা ডিম বা এতে তৈরি খাবার যেমন হোমমেইড মায়োনেজ, কাঁচা কুকি ডো, হোলান্ডেইস সস এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে সালমোনেলা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

উচ্চ পারদযুক্ত মাছ: পারদযুক্ত মাছ যেমন শার্ক, সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকেরেল, বিগ-আই টুনা এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ পারদ ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নিরাপদ মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, ট্রাউট খাওয়া যেতে পারে, তবে তা সপ্তাহে ২-৩ বারের বেশি নয়।

পাস্তুরাইজ করা হয়নি এমন দুগ্ধজাত পণ্য ও ফলের রস: পাস্তুরাইজ না করা দুধ, জুস, নরম চিজ (ব্রি, ক্যামেম্বার্ট), ব্লু চিজ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে লিস্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য বিপজ্জনক।

গর্ভাবস্থায়-নিষিদ্ধ-খাবার-সমূহ

প্রক্রিয়াজাত মাংস: হট ডগ, সসেজ, ডেলি মিটস (যেমন সালামি, পেপারোনি) এড়িয়ে চলা উচিত যদি সেগুলো ভালোভাবে গরম না করা হয়, কারণ এগুলোতে লিস্টেরিয়া এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।

ক্যাফেইন: অতিরিক্ত ক্যাফেইন (যেমন চা, কফি, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্কস) ভ্রূণের ওজন কমানোর ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা উচিত, যা ১-২ কাপ কফির সমান।

অ্যালকোহল: গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অ্যালকোহল ভ্রূণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং ফিটাল অ্যালকোহল সিন্ড্রোম (FAS) এর কারণ হতে পারে, যা ভ্রূণের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সমস্যা তৈরি করে।

কৃত্রিম মিষ্টি (আটিফিশিয়াল সুইটনার্স): কিছু কৃত্রিম মিষ্টি যেমন স্যাকারিন এবং আসপার্টেম গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

কাঁচা অঙ্কুরিত বীজ (স্প্রাউটস): মুগ ডাল, মসুর ডাল এবং অন্যান্য কাঁচা স্প্রাউট এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার: অতিরিক্ত মশলাযুক্ত এবং তৈলাক্ত খাবার (যেমন ফাস্টফুড, ফ্রাইড ফুড) গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, এবং গ্যাস তৈরি করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, এবং প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলোতে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম, চিনি, এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত লিভার বা লিভারের তৈরি খাবার: লিভারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ (রেটিনল) থাকে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভিটামিন এ খেলে ভ্রূণের বিকাশে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তাই লিভার বা লিভারজাত খাবার কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

অতিরিক্ত চিনি ও শর্করা: অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি খাবার যেমন কেক, মিষ্টান্ন, ক্যান্ডি, সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আনারস এবং পেঁপে (কাঁচা): কাঁচা পেঁপে এবং আনারসে কিছু এনজাইম থাকে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই ফলগুলো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত।

লেখকের মতামত: গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা ভ্রূণের সুস্থ বিকাশ এবং মায়ের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। কাঁচা বা আধা-সিদ্ধ সবজি না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থাকতে পারে, যা মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সবজি ভালোভাবে ধুয়ে এবং সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত। পরিমিতভাবে লেবু খাওয়া গর্ভাবস্থায় বেশ উপকারী। তবে যদি লেবু খাওয়ার পর অস্বস্তি বা সমস্যা হয়, যেমন অ্যাসিডিটি বা বমি বাড়ে, তাহলে তা কম খাওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমাদের আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url