রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কিছু কার্যকরী উপায়
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমাদের আজকের আর্টিকেল রক্তের কোলেস্টরল কি, বাড়ার কারণ, শরীরের জন্য মাত্রা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
রক্তের কোলেস্টরল হলো এক কথায় রক্তের চর্বি। এই চর্বি বেড়ে গেলে আমাদের শরীরে নানা রকমের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এটি নিয়ন্ত্রন করা জরুরী। আমাদের আজকের আর্টিকেলে মাধ্যমে আপনাদের সামনে রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পোস্ট সূচীপত্র: রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায়
- রক্তের কোলেস্টরল কি
- রক্তে কোলেস্টরল এর স্বাভাবিক মাত্রা কত
- রক্তে কোলেস্টরল এর মাত্রা বেড়ে গেলে কি হয়
- রক্তে কোলেস্টরল বাড়ার কারণ
- রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায়
- রক্তে কোলেস্টরল কমানোর খাবার সমূহ
- রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- লেখকের মতামত: রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায়
রক্তের কোলেস্টরল কি
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায় জানার আগে জানা দরকার রক্তের কোলেস্টরল কি? রক্তের কোলেস্টেরল হল একটি মোমের মতো চর্বিযুক্ত পদার্থ যা রক্তে বিদ্যমান থাকে। এটি শরীরের কোষ তৈরিতে, হরমোন উৎপাদনে এবং ভিটামিন ডি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষেই কোলেস্টেরল থাকে এবং এটি প্রধানত যকৃৎ (লিভার) দ্বারা তৈরি হয়, তবে এটি কিছু খাবারের মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে।
কোলেস্টেরলের দুই প্রকার প্রধান অংশ রয়েছে
এলডিএল (LDL - Low-Density Lipoprotein): এই কোলেস্টেরলকে সাধারণত "খারাপ" কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি রক্তনালীতে জমা হয় এবং হার্টের ধমনীর প্রাচীরে বাধা সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
এইচডিএল (HDL - High-Density Lipoprotein): এটি "ভাল" কোলেস্টেরল হিসাবে পরিচিত। এই কোলেস্টেরল রক্তনালী থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে যায়, যেখানে তা প্রসেস হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
রক্তে কোলেস্টরল এর স্বাভাবিক মাত্রা কত
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায় জানার আগে এর পরিমিত মাত্রা সম্পর্কে ধারনা থাকা জরুরী। রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বিভিন্ন ধরণের কোলেস্টেরলের জন্য ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত রক্তে মোট কোলেস্টেরল, এলডিএল (LDL - খারাপ কোলেস্টেরল), এইচডিএল (HDL - ভালো কোলেস্টেরল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা চেক করা হয়। নিচে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রার মান দেওয়া হলো:
মোট কোলেস্টেরল (Total Cholesterol):
- স্বাভাবিক মাত্রা: ২০০ mg/dL এর নিচে
- সীমান্তবর্তী উচ্চ মাত্রা: ২০০-২৩৯ mg/dL
- উচ্চ মাত্রা: ২৪০ mg/dL এর বেশি
এলডিএল কোলেস্টেরল (LDL - Low-Density Lipoprotein):
- স্বাভাবিক মাত্রা: ১০০ mg/dL এর নিচে
- স্বাভাবিকের উপরে: ১০০-১২৯ mg/dL (যারা স্বাস্থ্যবান তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য, তবে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে কমিয়ে রাখা উচিত)
- সীমান্তবর্তী উচ্চ: ১৩০-১৫৯ mg/dL
- উচ্চ মাত্রা: ১৬০-১৮৯ mg/dL
- খুবই উচ্চ: ১৯০ mg/dL এর বেশি
এইচডিএল কোলেস্টেরল (HDL - High-Density Lipoprotein):
- স্বাভাবিক মাত্রা: পুরুষদের জন্য: ৪০ mg/dL এর উপরে, মহিলাদের জন্য: ৫০ mg/dL এর উপরে
- লো মাত্রা: ৪০ mg/dL এর নিচে (পুরুষদের জন্য), ৫০ mg/dL এর নিচে (মহিলাদের জন্য)
- উচ্চ মাত্রা: ৬০ mg/dL বা তার বেশি (এই মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়)
ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglycerides):
- স্বাভাবিক মাত্রা: ১৫০ mg/dL এর নিচে
- সীমান্তবর্তী উচ্চ: ১৫০-১৯৯ mg/dL
- উচ্চ মাত্রা: ২০০-৪৯৯ mg/dL
- খুবই উচ্চ: ৫০০ mg/dL বা তার বেশি
রক্তে কোলেস্টরল এর মাত্রা বেড়ে গেলে কি হয়
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায় পূর্বে জানতে হবে এটি বেড়ে গেলে আমাদের শরীরের কি ক্ষতি হতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীতে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সাধারণত ধমনীর দেয়ালে জমা হতে শুরু করে, যা ধীরে ধীরে ব্লক বা সংকীর্ণতা সৃষ্টি করে। এ অবস্থাকে এথেরোস্ক্লেরোসিস বলা হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং হৃদরোগ ও অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে যা হতে পারে:
হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack): ধমনীগুলোতে কোলেস্টেরল জমে গেলে রক্তপ্রবাহ কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এটি হার্টে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে হার্টের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
আরো পড়ুন: এক সপ্তাহে পেটের মেদ বা চর্বি কমান ৭ টি উপায়ে।
স্ট্রোক (Stroke): মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো ব্লক হলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে স্ট্রোক হয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক অক্ষমতা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (Peripheral Artery Disease): কোলেস্টেরলের জমা শরীরের অন্যান্য ধমনীগুলোতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পায়ের ধমনীগুলোতে। এর ফলে পায়ে ব্যথা, চলাচলে সমস্যা এবং অন্যান্য গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ: রক্তনালীগুলোর ব্লক হওয়ার কারণে হৃদপিণ্ডকে বেশি চাপ দিয়ে রক্ত পাম্প করতে হয়, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
এনজাইনা (Angina): কোলেস্টেরলের কারণে হার্টে অক্সিজেন সরবরাহ কম হলে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব হয়, যা এনজাইনা নামে পরিচিত।
রক্তে কোলেস্টরল বাড়ার কারণ
রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যা সরাসরি আমাদের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, এবং কিছু ক্ষেত্রে বংশগতির সাথে সম্পর্কিত। নিচে রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির মূল কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: প্রাণিজ চর্বি, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মাখন বা চিজের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বৃদ্ধি পায়।
- ট্রান্স ফ্যাট: প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমায়। ভাজা-পোড়া খাবার এবং বেকারি আইটেমে সাধারণত এই ফ্যাট পাওয়া যায়।
- চিনি এবং শর্করা: অতিরিক্ত চিনি এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাবার (যেমন সোডা, মিষ্টি, কেক) খেলে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কোলেস্টেরলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: যারা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেন না, তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম না করার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হতে থাকে, যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষত যারা বেশি ওজনের, তাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেশি এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কম থাকে। শরীরের ভেতরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হলে তা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং কোলেস্টেরল সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।
ধূমপান: ধূমপান রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়। এটি ধমনীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে কোলেস্টেরল জমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপান হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, কারণ এটি ধমনীগুলোর অভ্যন্তরীণ ক্ষতি করে এবং কোলেস্টেরল দ্রুত জমা হতে সাহায্য করে।
বংশগত কারণ: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ জেনেটিক বা বংশগত হতে পারে। ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া নামক একটি জেনেটিক অবস্থা রয়েছে, যা শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যদি কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে নিজেরও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি বেশি থাকে।
অতিরিক্ত মদ্যপান: নিয়মিত বা অতিরিক্ত মদ্যপান করলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের সামগ্রিক চর্বির মাত্রা বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
বয়স ও লিঙ্গ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০ বছর বয়সের পর থেকে শরীরে কোলেস্টেরল স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে শুরু করে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, মেনোপজের পরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমে যায়।
চিকিৎসাগত কারণ: ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বেশি হয়ে যায়। থাইরয়েডের সমস্যা বা লিভার এবং কিডনি রোগ থাকলেও কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে, কারণ এসব অঙ্গ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে।
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায়
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সঠিক জীবনধারা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায় এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। নিচে কোলেস্টেরল কমানোর কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফল, শাকসবজি, এবং পুরো শস্যজাত খাবার যেমন ওটমিল, বার্লি ইত্যাদি ফাইবারে সমৃদ্ধ। ফাইবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমানো: প্রাণিজ চর্বি (যেমন মাংসের চর্বি, চিজ, মাখন) ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবর্তে মাছ, বাদাম, এবং অলিভ অয়েল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া উচিত।
ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করা: ট্রান্স ফ্যাট কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে এবং তা প্যাকেটজাত, ভাজা-পোড়া, এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে বেশি থাকে। এগুলি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: মাছ, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট) হার্টের জন্য ভালো এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক।
শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে ভাল কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের শারীরিক পরিশ্রম করার চেষ্টা করুন। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং করার মাধ্যমে সহজে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ওজন কমানো: অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হতে পারে। সামান্য ওজন কমানোর মাধ্যমেও খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমানো সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস থেকে অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি কমিয়ে ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন: রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার। পুদিনা পাতার উপকারিতা।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়া: ধূমপান রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং ভাল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ধূমপান ছাড়লে HDL বা ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, এবং তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ করা: অতিরিক্ত মদ্যপান কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি মদ্যপান করেন তবে তা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাখুন বা পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়।
ওষুধ সেবন (ডাক্তারের পরামর্শে): খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের পরেও যদি কোলেস্টেরল না কমে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে স্ট্যাটিন বা অন্যান্য কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে যদি পরিবারে হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকে। ডাক্তার আপনার কোলেস্টেরল পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।
রক্তে কোলেস্টরল কমানোর খাবার সমূহ
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য কিছু বিশেষ ধরনের খাবার বেশ কার্যকর। এই খাবারগুলো খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সহায়ক। নিচে রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর জন্য উপযোগী খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
ওটমিল এবং ফাইবারযুক্ত শস্য : ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। ওটমিল এবং অন্যান্য উচ্চ ফাইবারযুক্ত শস্য যেমন বার্লি, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৫-১০ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার যুক্ত করলে তা কোলেস্টেরল কমানোর জন্য কার্যকর হতে পারে।
ফল এবং শাকসবজি: আপেল, আঙুর, কমলা, বেরি প্রভৃতি ফল ফাইবারে সমৃদ্ধ এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। শাকসবজি যেমন পালং শাক, বেগুন, গাজর, ব্রোকলি কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে, কারণ এগুলোতে ক্যালোরি কম এবং পুষ্টি বেশি।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ফ্যাটযুক্ত মাছ (যেমন স্যামন, ম্যাকারেল, টুনা, সার্ডিন) এবং ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট ইত্যাদিতে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার ফ্যাটযুক্ত মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
বাদাম: আখরোট, আমন্ড, কাজু প্রভৃতি বাদামে হেলদি ফ্যাট এবং ফাইবার থাকে, যা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ৫ শতাংশ কমে যায়।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল স্যাচুরেটেড ফ্যাটের ভালো বিকল্প। এটি মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। রান্নায় বা সালাদে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমানো সম্ভব।
বিনস এবং ডাল: বিনস (যেমন কালো বিন, মটরশুটি, চনা) এবং ডাল দ্রবণীয় ফাইবারের একটি ভালো উৎস। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার বিনস বা ডাল খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখার জন্য উপকারী।
সয়া প্রোটিন: সয়া প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন সয়া দুধ বা টফু খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিন খাওয়া LDL কোলেস্টেরল প্রায় ৫-৬ শতাংশ কমাতে পারে।
সবুজ চা: সবুজ চাতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোলেস্টেরল কমাতে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত সবুজ চা পান করা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
এভোকাডো: এভোকাডো ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। এটি মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ, যা হার্টের জন্য উপকারী। এটি সালাদ বা স্যান্ডউইচে যুক্ত করে খাওয়া যেতে পারে।
ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, কারণ বেশি পরিমাণে চকলেট খেলে ক্যালোরি এবং শর্করা বেড়ে যেতে পারে।
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এলডিএল কোলেস্টেরল বেশি হলে এটি ধমনীর প্রাচীরে জমা হয় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এইচডিএল কোলেস্টেরল বেশি হলে তা খারাপ কোলেস্টেরলকে রক্তনালী থেকে বের করতে সাহায্য করে। ট্রাইগ্লিসারাইড উচ্চ হলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি সঙ্গে এলডিএল বেশি এবং এইচডিএল কম থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে হৃদরোগ এবং অন্যান্য জটিলতা এড়ানো যায়।
লেখকের মতামত: রক্তে কোলেস্টরল কমানোর উপায়
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা কমানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, এবং জীবনধারার পরিবর্তন প্রয়োজন। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি যারা পুরো পড়েছেন তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।
ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url