বিচি কলার উপকারিতা জেনে নিন। বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা

 

বিচি কলার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আপনি আজকের এই আর্টিকেল পড়লে বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বিচি-কলার-উপকারিতা

বিচি কলা সাধারণত গ্রামের মানুষের কাছে বেশি পরিচিত। শহরের মানুষ খুব একটা পরিচিত নয় এই কলার সাথে। যারা এই বিচি কলা ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য।

পোস্ট সূচীপত্র: বিচি কলার উপকারিতা

বিচি কলা পরিচিতি

বিচি কলা হল একটি বিশেষ প্রজাতির কলা, যা সাধারণ কলার তুলনায় অনেকটা আলাদা। বিচি কলা সাধারণত বনাঞ্চল বা পাহাড়ি এলাকায় জন্মায়। এর কলার ভেতরে ছোট ছোট কালো বিচি বা বীজ থাকে। এই কলার ফল আকারে ছোট এবং তুলনামূলকভাবে কম মিষ্টি হলেও এটি পুষ্টিতে ভরপুর। কলার আকার ছোট হয় এবং এর ছাল হলুদ বা সবুজাভ হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: পিপুল পাতা ও ফলের উপকারিতা। পিপুল পাতার ধর্মীয় গুরুত্ব।

বিচি কলার বিশেষত্ব হল এর ভিতরে শক্ত বীজ। বীজগুলো সাধারণত ছোট, কালো এবং শক্ত হয়, যা সাধারনত খাওয়া হয় না। তবে পাকা কলার বীজ সহ খাওয়া যায়। এর স্বাদ সাধারণত মিষ্টি হলেও এটি অন্যান্য কলার মতো ততটা মিষ্টি নয়। কিছু বিশেষ অঞ্চলে বিচি কলা রান্নায় বা বিভিন্ন ভর্তায় ব্যবহার করা হয়। বিচি কলা ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস। বিচি কলা বনাঞ্চল বা পাহাড়ি এলাকার প্রজাতি হওয়ার কারণে বাজারে সেভাবে সহজে পাওয়া যায় না।

বিচি কলায় কোন পুষ্টিগুন কি পরিমানে থাকে

বিচি কলায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী। সাধারণ কলার মতোই, বিচি কলাও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যদিও এতে ছোট ছোট বীজ থাকায় খাওয়ার পদ্ধতি একটু আলাদা। নিচে বিচি কলার প্রধান পুষ্টি উপাদানগুলো ও তাদের পরিমাণের একটি তালিকা দেওয়া হলো:

  • ক্যালোরি: বিচি কলা প্রতিটি পরিমাণে কম ক্যালোরি সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। একটি মাঝারি আকারের বিচি কলায় প্রায় ৯০-১১০ ক্যালোরি থাকে।
  • কার্বোহাইড্রেট : বিচি কলায় প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে।
  • ফাইবার: বিচি কলায় ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে। এতে প্রায় ২.৬-৩ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন সি: বিচি কলা ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতি ১০০ গ্রাম বিচি কলায় প্রায় ৮.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
  • পটাশিয়াম: বিচি কলায় উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম বিচি কলায় প্রায় ৩৫৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।
  • ভিটামিন বি৬: বিচি কলা ভিটামিন বি৬-এর একটি ভালো উৎস, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। প্রতিটি কলায় প্রায় ০.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬ থাকে।
  • ম্যাগনেসিয়াম: বিচি কলায় প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং পেশির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • আয়রন: বিচি কলায় প্রায় ০.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা শরীরের রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • এন্টিঅক্সিডেন্ট : বিচি কলায় বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, যা কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • প্রোটিন: বিচি কলায় প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলক কম। প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় প্রায় ১.১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
  • ফ্যাট: বিচি কলায় খুব কম ফ্যাট থাকে, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী। এতে প্রায় ০.৩ গ্রাম ফ্যাট থাকে।

বিচি কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি শরীরের নানা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিচি কলার উপকারিতা

বিচি কলার উপকারিতা অনেক রয়েছে, যা এর পুষ্টিগুণের হয়ে থাকে। এর উপকারিতার মধ্যে রয়েছে হজম শক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং পেশির সুস্থতা বজায় রাখাসহ আরো অনেক উপকারিতা। নিচে বিচি কলার কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

হজমশক্তি বৃদ্ধি: বিচি কলায় প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের কার্যক্রমকে সুস্থ রাখে।

আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা। বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। পটাশিয়াম হৃদপিণ্ডের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: বিচি কলায় ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। ভিটামিন সি শরীরকে বিভিন্ন জীবাণু এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

পেশি ও নার্ভের কার্যক্রমে সাহায্য: বিচি কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম পেশির কার্যক্রম ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এটি পেশি সংকোচন এবং স্নায়ুর কার্যক্রমের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে, ফলে শরীরে ক্লান্তি কম হয়।

হাড়ের সুস্থতা রক্ষায় : ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচি কলায় ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়কে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি : বিচি কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া) প্রতিরোধে সাহায্য হয়।

শক্তি সরবরাহ : বিচি কলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। এটি ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সহায়ক।

ত্বকের যত্ন : বিচি কলায় থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি বার্ধক্যজনিত চিহ্ন, যেমন– বলিরেখা এবং ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষায়: বিচি কলায় থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি হার্টের জন্য ভালো এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে: বিচি কলার পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম, মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রমে সহায়তা করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে, মন ভালো রাখতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিচি কলা নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত করতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই বলা যায় বিচি কলার উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি।

বিচি কলা কিভাবে খাওয়া যায়

বিচি কলার উপকারিতা জানার পর এখন বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা দরকার। বিচি কলা সাধারণত বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে খাওয়া যায়। এটি সরাসরি খাওয়া ছাড়াও রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বিচি কলা একটু কঠিন এবং এতে বীজ থাকে বলে অনেক সময় এটি প্রস্তুত করে খাওয়া হয়। নিচে কিছু জনপ্রিয় পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

সরাসরি খাওয়া: বিচি কলার খোসা ছাড়িয়ে এটি সরাসরি খাওয়া যায়। তবে এতে ছোট ছোট শক্ত বিচি থাকে, যা খাওয়ার সময় আলাদা করে ফেলতে হয়। কলাটি খানিকটা কম মিষ্টি হলেও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ।

বিচি-কলা-কিভাবে-খাওয়া-যায়

সিদ্ধ করে খাওয়া: বিচি কলা সিদ্ধ করে খাওয়া একটি প্রচলিত পদ্ধতি। বিশেষ করে রান্নায় ব্যবহারের আগে এটি সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ করলে এর বিচিগুলো আলাদা হয়ে যায় এবং খাওয়া সহজ হয়।

ভর্তা তৈরি করে: বিচি কলা সেদ্ধ করে ভর্তা তৈরি করা যায়। এর সাথে সরিষার তেল, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, লবণ ইত্যাদি মিশিয়ে মাখা হয়। ভর্তা হিসেবে এটি খেতে অনেক সুস্বাদু হয় এবং ভাতের সাথে মজাদার হয়।

ভাজি বা তরকারি হিসেবে: বিচি কলা ছোট ছোট টুকরা করে ভাজি বা তরকারি রান্না করা যায়। আলু বা অন্যান্য সবজির সাথে মিশিয়ে মসলার সাথে ভাজি বা তরকারি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

ডাল ও শাকের সাথে মিশিয়ে: বিচি কলা ডালের সাথে মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ডালে একটি বিশেষ স্বাদ এনে দেয়। শাক বা অন্যান্য সবজির সাথেও এটি মিশিয়ে রান্না করা যায়।

ফল হিসেবে স্ন্যাকস: বিচি কলা অন্য ফলের মতোই ছোট ছোট টুকরা করে সালাদ বা ফলের স্ন্যাকস হিসেবেও খাওয়া যায়। এর স্বাদ এবং পুষ্টি দেহে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে পারে।

ডেজার্ট বা পিঠায় ব্যবহার: কিছু এলাকায় বিচি কলা পিঠা বা ডেজার্টে ব্যবহৃত হয়। সেদ্ধ করা কলা মিষ্টি খাবার বা পিঠায় যোগ করা হয়, যা একটি বিশেষ স্বাদ তৈরি করে।

বিচি কলা কীভাবে রান্নায় ব্যবহার হয়

বিচি কলা রান্নায় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকায়। এটি ভর্তা, তরকারি এবং ভাজি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। নিচে বিচি কলার কয়েকটি রান্নার পদ্ধতি দেওয়া হল:

বিচি কলার ভর্তা: যে যে উপকরণ প্রয়োজন: বিচি কলা – ২-৩ টি (পাকা),সরিষার তেল – ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ – ২-৩ টি, পেঁয়াজ কুচি – ১ টি (মাঝারি আকারের), লবণ – স্বাদমতো, রসুন – ২-৩ কোয়া। এখন বিচি কলা ভালোভাবে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন। একটি পাত্রে সিদ্ধ কলা, ভাজা শুকনা মরিচ, লবণ, এবং রসুন দিয়ে মেখে নিন। সরিষার তেলে পেঁয়াজ ভেজে নিয়ে মাখানো কলায় মিশিয়ে দিন। ভর্তা প্রস্তুত হলে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

বিচি কলার ভাজি:  যে যে উপকরণ প্রয়োজন: বিচি কলা – ৩-৪ টি, সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি – ১ টি, শুকনা মরিচ – ২-৩ টি, হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ, লবণ – স্বাদমতো। এখন বিচি কলার খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করুন। একটি প্যানে তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও পেঁয়াজ ভেজে নিন। তারপর বিচি কলার টুকরাগুলো দিয়ে নাড়ুন এবং হলুদ ও লবণ যোগ করুন। কিছুক্ষণ ভাজুন যতক্ষণ না সবকিছু ভালোভাবে মিশে যায় এবং সামান্য মচমচে হয়। গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

আরো পড়ুন: নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা। নিমপাতা ব্যবহারের নিয়ম।

বিচি কলার ঝোল: যে যে উপকরণ প্রয়োজন: বিচি কলা – ৪-৫ টি (সিদ্ধ করে টুকরা করা), আলু – ১ টি (টুকরা করা), সরিষার তেল – ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা – ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা – ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়ো – স্বাদমতো, জিরা গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ, লবণ – স্বাদমতো।প্রথমে বিচি কলা ও আলু সেদ্ধ করে টুকরো করে নিন। একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও রসুন বাটা ভেজে নিন। হলুদ, মরিচ ও জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন। সেদ্ধ করা বিচি কলা ও আলু দিয়ে সব মশলা মিশিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঝোল তৈরি করুন। ১০-১৫ মিনিট রান্না করে ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।

বিচি কলা মূলত স্থানীয় এবং ঐতিহ্যবাহী রান্নায় বেশি ব্যবহৃত হয়, যা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু।

বিচি কলা খাওয়ার অপকারিতা

আমাদের বিচি কলা খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিচি কলা সাধারণত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে বিচি কলা খাওয়ার সম্ভাব্য কিছু ক্ষতির দিকগুলো উল্লেখ করা হলো:

বীজের কারণে সমস্যা: বিচি কলার বীজগুলো ছোট, শক্ত এবং খাবার অনুপযোগী। যদি বীজ না চিবিয়ে গিলে ফেলা হয়, তাহলে এটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বা গলার ভিতরে আটকে যেতে পারে। এ কারণে বিচি কলা খাওয়ার সময় বীজগুলো সাবধানে আলাদা করা উচিত।

অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা: বিচি কলায় প্রচুর আঁশ (ফাইবার) থাকে, যা সাধারণত হজমের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন গ্যাস, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া। বিশেষ করে যারা আঁশযুক্ত খাবার কম খান, তারা বেশি পরিমাণে বিচি কলা খেলে হজমে সমস্যা অনুভব করতে পারেন।

অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা: অনেকের মধ্যে কলা বা এর মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট প্রোটিনের প্রতি সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি থাকতে পারে। এমন ব্যক্তিদের জন্য বিচি কলা খাওয়ার পর অ্যালার্জির লক্ষণ, যেমন চুলকানি, র‍্যাশ, ঠোঁট বা গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। যদি এ ধরনের অ্যালার্জি থাকে, তবে বিচি কলা খাওয়া উচিত নয়।

রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: যদিও বিচি কলা সাধারণ কলার তুলনায় কম মিষ্টি, তবে এটি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই এই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

কিডনির সমস্যায় পটাশিয়াম বেশি হওয়া: বিচি কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা সাধারণভাবে হৃদপিণ্ড এবং রক্তচাপের জন্য ভালো। তবে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বেশি পটাশিয়াম খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে যেতে পারে। এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা: অনেক সময় কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষ করে যদি অনেক সময় খালি পেটে কলা খাওয়া হয়, তবে গ্যাস্ট্রিকের অ্যাসিডিক সমস্যা হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি: বিচি কলায় ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয়, তবে এটি ওজন বাড়াতে পারে।

ক্ষতিকর রাসায়নিক: যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত বিচি কলা কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক দিয়ে চাষ করা হয়, তবে এতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকতে পারে। এমন কলা খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি।

বিচি কলা কোথায় পাওয়া যায়

বিচি কলা সাধারণত বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি ও বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি একটি বন্য প্রজাতির কলা, যা বিশেষ করে প্রাকৃতিক বনভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় জন্মায়। বিচি কলা বাজারে সাধারণ কলার মতো সহজলভ্য নয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

বাংলাদেশে: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, এবং ময়মনসিংহের কিছু পাহাড়ি ও বনাঞ্চল এলাকায় বিচি কলা পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জায়গায় এটি জন্মে। স্থানীয় আদিবাসী বা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মাঝে এই কলা বেশি জনপ্রিয়, এবং তারা এটি নিজেদের খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে।

ভারতে: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যেমন– আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশের বনাঞ্চলে বিচি কলা পাওয়া যায়। এছাড়া দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গাতেও এটি পাওয়া যায়।

অন্যান্য দেশ: এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন– মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং শ্রীলঙ্কার কিছু বনাঞ্চলেও বিচি কলার প্রজাতি জন্মায়।

বিচি কলা সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় না, তাই এটি স্থানীয় বাজারে খুব বেশি দেখা যায় না। তবে যেসব অঞ্চলে এই কলা প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়, সেসব স্থানের স্থানীয় বাজারে বা গ্রামীণ এলাকায় সীমিত পরিসরে এটি পাওয়া যায়।

বিচি কলা খাওয়ার সতর্কতা

বিচি কলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এর বীজ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। নিচে বিচি কলা খাওয়ার কয়েকটি সতর্কতার দিক উল্লেখ করা হলো:

বীজের কারণে সাবধানতা: বিচি কলার ভিতরে শক্ত বীজ থাকে, যা খাওয়া যায় না। খাওয়ার সময় বীজগুলো আলাদা করে ফেলতে হবে। বীজগুলি ছোট ও শক্ত হওয়ায় এগুলো গিলে ফেললে হজমের সমস্যা বা গলার মধ্যে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাবধান থাকা প্রয়োজন।

বিচি-কলা-খাওয়ার-সতর্কতা

অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা: বিচি কলা বেশি পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা, যেমন– গ্যাস, পেট ফাঁপা, এবং ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে প্রচুর আঁশ (ফাইবার) থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে হজমে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা: যাদের কলার প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের বিচি কলা খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে। অ্যালার্জির লক্ষণ যেমন– ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, গলা বা ঠোঁট ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে বিচি কলা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্কতা: বিচি কলায় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে খেতে হবে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

কিডনি রোগীদের জন্য সতর্কতা: বিচি কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। কিডনি রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরে জমা হতে পারে, যা হৃদরোগ বা অন্যান্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। কিডনির সমস্যা থাকলে বিচি কলা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: অনেকের ক্ষেত্রে খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে। বিচি কলা খাওয়ার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত, বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে।

সঠিকভাবে ধুয়ে নেওয়া: যদি কলা রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করে চাষ করা হয়, তবে সেটি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত, কারণ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা: বিচি কলায় কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি থাকে, যা বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বাড়তে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

এই সতর্কতাগুলো মাথায় রেখে বিচি কলা খেলে তা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। যাদের বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যেমন– ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, বা অ্যালার্জি, তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিচি কলা খাওয়া উচিত।

লেখকের মতামত: বিচি কলার উপকারিতা

আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে বিচি কলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই পোস্টটা পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আমাদের বিচি কলার উপকারিতা এই আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url