গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমাদের আজকের আর্টিকেলে কচু শাক এর পুষ্টিগুন, কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে কচু শাক সবজি হিসেবে খুবই বেশি পরিচিত। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের কাছে। কিন্তু এর পুষ্টিগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকরেই অজানা। তাই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনি কচু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
পোষ্ট সূচীপত্র: গর্ভাবস্থায় কচু শাক
- কচু শাক পরিচিতি
- কচুর প্রকারভেদ
- কচু পাতার পুষ্টিগুন
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার অপকারিতা
- স্বাভাবিক অবস্থায় কচু শাকের উপকারিতা
- কচু শাক খেলে মুখ চুলকানোর কারণ
- কচু শাক খেলে মুখ চুলকানো থেকে পরিত্রানের উপায়
- গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার সতর্কতা
- লেখকের মতামত: শেষ কথা
কচু শাক পরিচিতি
কচু শাক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় শাক। এর ইংরেজি হলো Taro Greens. এই সবজিটি মূলত কচি পাতা ও ডাঁটা নিয়ে গঠিত। কচু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Colocasia esculenta। এটি araceae পরিবারের ও colocasieae গোত্রীয় গাছ। এই গাছটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে জন্মে থাকে এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কচু শাকের রঙ সবুজ, তবে কিছু প্রজাতির কচু শাকের রঙ হালকা বেগুনি রঙেরও হয়ে থাকে। এই শাকটি সাধারণত মোলায়েম এবং একটু কষযুক্ত। রান্নার পরে এটি একটি বিশেষ ধরনের নরম স্বাদ ধারণ করে। কচু শাকে ভিটামিন এ, সি, ও আয়রন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে, যা শরীরের পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় পালং শাক: খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
কচু শাককে বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। যেমন:সর্ষে দিয়ে কচু শাক, কচু শাক ভাজি, কচু শাকের ডাল।এছাড়াও, এটি বিভিন্ন শাকের সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়, যা স্বাদে বৈচিত্র্য এনে দেয়। কচু শাক একটি সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য যা নিয়মিত আহারে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কচুর প্রকারভেদ
কচু একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের প্রজাতিতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কচু বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। নিচে কচুর কিছু প্রজাতি এবং তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
- রঙা কচু: এই কচু সাধারণত ডাঁটা ও পাতার রঙের কারণে পরিচিত। ডাঁটা লালচে বা বেগুনি রঙের হয়, আর পাতা সবুজ রঙের।রঙা কচু সাধারণত ভাজি বা তরকারি হিসেবে রান্না করা হয়। এর ডাঁটা ও পাতা উভয়ই খাওয়া যায়।
- মান কচু: মান কচুর ডাঁটা সবুজ রঙের হয় এবং এটি আকারে বেশ মোটা ও বড় হয়। এর কন্দ বা মূল সাধারণত বড় এবং মাংসল হয়। মান কচুর মূল বা কন্দ আলুর মতো রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়াও এর ডাঁটা ও পাতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- লতি কচু: লতি কচু হলো কচু গাছের ডাঁটার কচি অংশ, যা বেশ নরম ও সরু হয়। এটি সবুজ রঙের হয়। লতি কচু ভাজি বা সর্ষে দিয়ে রান্না করা হয়। এটি খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাদে মোলায়েম।
- পানিকচু: পানিকচু সাধারণত জলাভূমিতে বা পানিতে জন্মায়। এর পাতাগুলো বড় ও সরল এবং গাছে বড় আকারের সবুজ কচুর ডাঁটা থাকে। পানিকচুর ডাঁটা ও পাতা তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি ভাজি, তরকারি বা মাছের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়।
- মুখীকচু: মুখীকচু মূলত এর কন্দের জন্য পরিচিত, যা গোলাকৃতির এবং মাটি নিচে বৃদ্ধি পায়। পাতাগুলি বড় এবং গাঢ় সবুজ রঙের হয়। মুখীকচুর কন্দ সাধারণত সিদ্ধ করে খাওয়া হয় বা তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এর পাতা ও ডাঁটাও তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়।
- দুধ কচু: দুধ কচুর ডাঁটা কিছুটা পুরু এবং দুধ সাদা বা হালকা সবুজ রঙের হয়। দুধ কচু ভাজি, চচ্চড়ি, বা অন্যান্য তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটু আলাদা স্বাদের জন্য পরিচিত।
- পিড়া কচু: পিড়া কচু দেখতে কিছুটা ছোট এবং গাঢ় সবুজ বা বেগুনি রঙের হয়। এর ডাঁটা ও কন্দ খাওয়ার উপযোগী। পিড়া কচু সাধারণত তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ডাঁটা ও মূল অংশ রান্না করে খাওয়া হয়।
কচু শাকের পুষ্টিগুন
কচু শাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিচে কচু শাকে থাকা প্রধান পুষ্টিগুণের একটি তালিকা এবং তাদের পরিমাণ দেয়া হলো:
কচু শাকে থাকা পুষ্টিগুণের তালিকা (প্রতি ১০০ গ্রাম)
ক্রমিক | পুষ্টিগুনের নাম | পুষ্টিগুনের পরিমান |
---|---|---|
১ | ক্যালোরি | ৫৫ ক্যালোরি |
২ | কার্বোহাইড্রেড | ৬-৭ গ্রাম |
৩ | প্রোটিন | ২-৩ গ্রাম |
৪ | ফাইবার | ৪-৫ গ্রাম |
৫ | ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
৬ | ভিটামিন এ | ৪০০০-৫০০০ আই.ইউ |
৭ | ভিটামিন সি | ২৫-৩০ মিলিগ্রাম |
৮ | ভিটামিন বি-১ | ০.২২ মিলিগ্রাম |
৯ | ভিটামিন বি-২ | ০.২৬ মিলিগ্রাম |
১০ | ক্যালসিয়াম | ২২৭ মিলিগ্রাম |
১১ | পটাসিয়াম | ৫০০-৬০০ মিলিগ্রাম |
১২ | আয়রন | ০.৭-১ মিলিগ্রাম |
১৩ | ম্যাগনেশিয়াম | ৩০-৪০ মিলিগ্রাম |
এসব পুষ্টিগুনের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যেমন: ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা অক্সিজেন পরিবহনকে সহায়তা করে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়া মা ও অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। নিচে এর কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
ফোলেট (ভিটামিন B9) এর ঘাটতি পূরণ: কচু শাক ফোলেট এর ঘাটতি পূরণ করে। ফোলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে সহায়ক। কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট থাকে, যা শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আয়রন এর ঘাটতি পূরণ: কচু শাকে থাকা আয়রন গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়, এবং কচু শাক এই প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করে, যা মা ও শিশুর জন্য উপকারী।
ফাইবারের ভাল উৎস :কচু শাকে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। ফাইবার খাবার সহজে হজম হতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ভিটামিন এ সরবরাহ: কচু শাকে থাকা ভিটামিন এ গর্ভাবস্থায় মায়ের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়তা করে। তবে এটি পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে, কারণ ভিটামিন এ-এর অতিরিক্ত গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম এর অভাব পূরণ: ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম গর্ভাবস্থায় মায়ের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এই দুটি উপাদান শিশুর হাড়ের সঠিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পটাশিয়াম ঘাটতি পূরণ: কচু শাকে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয়, কারণ উচ্চ রক্তচাপ প্রি-একলাম্পসিয়া বা অন্যান্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।
কচু শাক সঠিকভাবে খেতে পারলে এটি মা ও শিশুর জন্য বেশ কয়েকটি পুষ্টিগুণের মাধ্যমে উপকার বয়ে নিয়ে আসে।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
রান্না সঠিকভাবে করা: কচু শাক ভালোভাবে সিদ্ধ বা রান্না করা জরুরি, যাতে ক্ষতিকর উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
পরিমিত পরিমানে খাওয়া: অতিরিক্ত কচু শাক খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
ডাক্তারের পরামর্শ: যদি গর্ভবতী মা কিডনির সমস্যা বা ভিটামিন এ-এর অতিরিক্ত গ্রহণের ঝুঁকিতে থাকেন, তবে কচু শাক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই সতর্কতাগুলি মেনে কচু শাক খেলে সাধারণত নিরাপদ এবং পুষ্টিকর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা এবং ঝুঁকি রয়েছে, যা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত:
অক্সালেটের উচ্চ মাত্রা: কচু শাকে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা শরীরে বেশি পরিমাণে জমা হলে কিডনিতে পাথর (কিডনি স্টোন) তৈরি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় এই ঝুঁকিটি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষত যদি মা কিডনির সমস্যায় ভুগে থাকেন।
অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা: কচু শাকে থাকা কিছু যৌগিক উপাদান গর্ভবতী মায়ের জন্য অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন মুখে বা গলায় চুলকানি, ফোলা বা জ্বালাপোড়া অনুভূতি হতে পারে। এটি বিশেষত অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা কচু শাক খেলে বেশি হয়।
বিষক্রিয়া: কিছু কচু প্রজাতিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল থাকে, যা সঠিকভাবে রান্না না করলে বিষাক্রিয়া করতে পারে। এই কারণে কচু শাক রান্নার সময় ভালোভাবে সিদ্ধ করা জরুরি, যাতে এর ক্ষতিকর যৌগিক উপাদানগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার। পুদিনা পাতার উপকারিতা।
হজমে সমস্যা: কচু শাক খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের হজমের সমস্যা হতে পারে। যেমন- পেট ফাঁপা, গ্যাস বা বদহজম। গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমস্যাগুলি বেশি বিরক্তিকর হতে পারে এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিষাক্ত ছত্রাকের সম্ভাবনা: যদি কচু শাক সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তবে এতে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে, যা খাদ্য বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। গর্ভাবস্থায় খাদ্য বিষক্রিয়া মা এবং অনাগত শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
অতিরিক্ত ভিটামিন এ-এর ঝুঁকি: কচু শাকে থাকা ভিটামিন এ সাধারণত উপকারী, তবে গর্ভাবস্থায় এর অতিরিক্ত গ্রহণ ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত, ভিটামিন এ-এর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ শিশুর জন্য টেরাটোজেনিক (ভ্রূণের বিকাশে ক্ষতিকর) হতে পারে।
ত্বকে বা গলায় চুলকানি: কচু শাক খাওয়ার পর কিছু মানুষ ত্বকে বা গলায় চুলকানি অনুভব করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষত অস্বস্তিকর হতে পারে এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
স্বাভাবিক অবস্থায় কচু শাকের উপকারিতা
স্বাভাবিক অবস্থায় কচু শাক খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কচু শাকের কয়েকটি প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ: কচু শাকে ভিটামিন এ, সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হজমে সহয়তা: কচু শাকে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কচু শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ: কচু শাকে থাকা আয়রন এবং ফোলেট রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহন নিশ্চিত করে।
ত্বকের জন্য : কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ত্বককে বয়সের ছাপ থেকে রক্ষা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কচু শাকে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যা শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে।
হাড়ের জন্য উপকারী: কচু শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: কচু শাকে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: কচু শাকে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি রেটিনার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং রাতকানা ও অন্যান্য চোখের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।
আরো পড়ুন: তুলসী পাতার কার্যকারী উপকারিতা। তুলসী পাতার ব্যবহার।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: কচু শাক কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূত হয়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
কচু শাক খেলে মুখ চুলকানোর কারণ
কচু শাক খেলে মুখ চুলকানোর প্রধান কারণ হলো এতে থাকা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল। এই ক্ষুদ্র সূচাকার ক্রিস্টালগুলো কচু শাকের কোষে উপস্থিত থাকে। যখন কচু শাক অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা হয় বা কাঁচা খাওয়া হয়, তখন এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালগুলি মুখ, গলা এবং ত্বকের সংস্পর্শে এসে চুলকানি, জ্বালা-পোড়া, বা ঝাঁঝালো অনুভূতি তৈরি করতে পারে। ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালগুলি সূচাকার হওয়ায়, এগুলো মুখ বা গলার সংবেদনশীল ত্বকে খোঁচা দেয়, যা চুলকানি ও জ্বালা সৃষ্টি করে।কিছু মানুষ ক্যালসিয়াম অক্সালেটের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারেন, যার ফলে তাদের ক্ষেত্রে এই চুলকানি বা জ্বালা অনুভূতি বেশি তীব্র হয়।
কচু শাক খেলে মুখ চুলকানো থেকে পরিত্রানের উপায়
কচু শাক খাওয়ার পরে মুখ চুলকানো থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্যর কচু শাক ভালোভাবে সিদ্ধ বা রান্না করা উচিত, কারণ তাপের প্রভাবে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালগুলো নরম হয়ে যায় এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যায়। প্রয়োজনে কচু শাক রান্নার সময় লেবুর রস বা টকযুক্ত কিছু মিশিয়ে রান্না করলে চুলকানি বা জ্বালা কম হতে পারে, কারণ এসিডিক পদার্থ ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। কচু শাক ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করা উচিত, যাতে শাকের সাথে লেগে থাকা ময়লা বা অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ দূর হয়ে যায়।
লেখকের মতামত: শেষ কথা
কচু শাক আমাদের প্রায় সকলের পরিচিতি এবং সহজলভ্য একটি সবজি। কচু আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়। যদিও কচু শাক গর্ভাবস্থায় উপকারী তবুও এটি সঠিকভাবে রান্না করা জরুরি, কারণ কাঁচা বা অপর্যাপ্ত রান্না করা কচু শাক খেলে মুখ ও গলার চুলকানি হতে পারে। এছাড়া কোন খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষত গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।
ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url