কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪। আজ কার্তিক মাসের কত তারিখ

  

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে কার্তিক মাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

কার্তিক-মাসের-ক্যালেন্ডার-২০২৪

আজ কার্তিক মাসের কত তারিখ আমরা অনেকেই জানিনা। কার্তিক মাসে অনেক ফলমূল, সবজি ও বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে। কার্তিক মাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি পুরো পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্র: কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪

কার্তিক মাস পরিচিতি

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ সম্পর্কে জানার আগে কার্তিক মাস সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করি। কার্তিক মাস হলো বাংলা সনের সপ্তম মাস এবং হিন্দু পঞ্জিকার অষ্টম মাস। কার্তিক মাসের নামকরণ হয়েছে দেবতা কার্তিকের নামে যিনি হিন্দু পুরাণে দেবী পার্বতী ও শিবের পুত্র এবং যুদ্ধের দেবতা হিসেবে পরিচিত। এই মাসটি সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে পড়ে এবং এটি হেমন্ত ঋতুর সূচনা করে।

কার্তিক মাস হিন্দুধর্মে একটি পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময়ে বিশেষ করে কার্তিক পূর্ণিমা, দীপাবলি, এবং ভাই ফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পালিত হয়। ভক্তরা এই মাসে উপবাস, দান এবং স্নান করার মাধ্যমে ব্রত পালন করেন। অনেক ভক্ত কার্তিক মাস জুড়ে গঙ্গা নদীতে বা অন্যান্য নদীতে পবিত্র স্নান করেন। এই পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ পূজা এবং অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। এটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং ভক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুন: আশ্বিন মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪। আজ আশ্বিন মাসের কত তারিখ।

কার্তিক মাস কৃষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়ে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়। তাই কৃষিকাজের দিক থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।এই মাসে বিভিন্ন অঞ্চলে রাস পূর্ণিমা ও কার্তিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে। কার্তিক মাসের এই সকল দিক থেকে বোঝা যায় যে, এটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, এবং সামাজিক দিক থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস।

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪

কার্তিক মাসের ক্যালন্ডার ২০২৪ এর ছবি নিচে দেওয়া হলো। এই ক্যালেন্ডার দেখে বুঝতে পারবেন আজ কার্তিক মাসের কত তারিখ?

কার্তিক-ক্যালেন্ডার-২০২৪

কার্তিক মাসের সরকারী ছুটি ও দিবস সমূহ

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ এ বিভিন্ন দিবস ও সরকারী ছুটি রয়েছে। সেসব সরকারী ছুটি ও দিবসের তালিকা ছক আকারে নিন্মে দেওয়া হলো:

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ এ ছুটির তালিকা:

সরকারী ছুটির বিবরণবাংলা তারিখইংরেজি তারিখ
দূর্গাপূজা,পোলিও দিবস ও জাতিসংঘ দিবস৮ই কার্তিক,১৪৩১২৪ অক্টোবর, ২০২৪


কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ এ বিভিন্ন দিবসসমূহের তালিকা: 

দিবসের নামবাংলা তারিখইংরেজি তারিখ
ট্রমা দিবস১লা কার্তিক, ১৪৩১১৭ অক্টোবর, ২০২৪
অস্টেঅপরেসিস দিবস৪ঠা, কার্তিক, ১৪৩১২০ অক্টোবর, ২০২৪
নিরাপদ সড়ক দিবস৬ই কার্তিক, ১৪৩১২২ অক্টোবর, ২০২৪
মিতব্যয়িতা দিবস ও বিশ্ব শহর দিবস১৪ই কার্তিক, ১৪৩১৩০ অক্টোবর, ২০২৪
কৃমি নিয়ন্ত্রন দিবস ও যুব দিবস১৬ই কার্তিক, ১৪৩১১লা নভেম্বর, ২০২৪
স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস১৭ই কার্তিক, ১৪৩১২রা নভেম্বর, ২০২৪
জেল হত্যা দিবস১৮ কার্তিক, ১৪৩১৩রা নভেম্বর, ২০২৪
সংবিধান দিবস১৯ কার্তিক, ১৪৩১৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪
সংহতি দিবস২২ শে কার্তিক, ১৪৩১৭ নভেম্বর, ২০২৪
রেডিওগ্রাফার দিবস২৩ কার্তিক, ১৪৩১৮ নভেম্বর, ২০২৪
নূর হোসেন দিবস২৫ কার্তিক, ১৪৩১১০ নভেম্বর, ২০২৪
নিউমোনিয়া দিবস২৭ কার্তিক, ১৪৩১১২ নভেম্বর, ২০২৪
ডায়াবেটিস দিবস২৯ কার্তিক, ১৪৩১১৪ নভেম্বর, ২০২৪
কৃষি দিবস৩০ কার্তিক, ১৪৩১১৫ নভেম্বর, ২০২৪

কার্তিক মাসের বৈশিষ্ট্য

কার্তিক মাস বাংলার পঞ্জিকায় হেমন্ত ঋতুর প্রথম মাস হিসেবে পরিচিত। আজ কার্তিক মাসের কত তারিখ এটা যদি আপনি জানেন তাহলে এই মাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। এ মাসটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, কৃষি এবং আবহাওয়াগত দিক থেকে এ মাসের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে কার্তিক মাসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরা হলো:

ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য

কার্তিক পূর্ণিমা: কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথি "কার্তিক পূর্ণিমা" নামে পরিচিত, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এ দিনে গঙ্গা বা অন্যান্য পবিত্র নদীতে স্নান করা খুবই মঙ্গলময় বলে বিশ্বাস করা হয়। পাপ মুক্তির জন্য এই স্নানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

দীপাবলি: এই মাসে দীপাবলি বা দেওয়ালি উৎসব পালিত হয়, যা আলোর উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক।

আরো পড়ুন: ৭ দিনে মুখের কালো দাগ দূর করার কার্যকরী উপায়।

ভাই ফোঁটা: দীপাবলির পরের দিন ভাই ফোঁটা উৎসব পালিত হয়। এটি ভাই-বোনের সম্পর্কের বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং দীর্ঘায়ু কামনায় পালিত হয়।

সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য

কার্তিক ব্রত: হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকেই কার্তিক মাস জুড়ে ব্রত পালন করেন। ভক্তরা উপবাস, নিরামিষ ভোজন এবং ভোরে নদীতে স্নান করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ভজন-সংগীতের মাধ্যমে প্রার্থনা করা হয়।

রাস পূর্ণিমা ও কার্তিক মেলা: এই সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে রাস পূর্ণিমা এবং কার্তিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলাগুলি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এবং লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে।

কৃষি বৈশিষ্ট্য

ফসল তোলা: কার্তিক মাসটি বাংলায় ফসল কাটার সময়। বিশেষত ধানসহ অন্যান্য শস্য এই সময়ে ঘরে তোলা হয়। তাই কৃষকদের জন্য এ মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উদযাপনের উপলক্ষও বটে।

প্রকৃতির পরিবর্তন: হেমন্ত ঋতুর শুরু হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আবহাওয়ায় শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যায়। গাছের পাতা ঝরা শুরু হয় এবং প্রকৃতিতে এক ধরনের শুষ্কতা দেখা দেয়, যা রবি ফসলের জন্য উপযুক্ত।

সামাজিক বৈশিষ্ট্য

উপবাস ও দান: কার্তিক মাসে উপবাস পালন করা এবং গরিব ও দরিদ্রদের মধ্যে দান করা একটি প্রচলিত প্রথা। এই সময়ে ধর্মীয় এবং সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নদীতে স্নান: পবিত্রতা অর্জনের লক্ষ্যে ভক্তরা এই মাসে নিয়মিত নদীতে স্নান করেন। এটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, স্বাস্থ্যগত কারণেও উপকারী বলে মনে করা হয়।

কার্তিক মাসে আবহাওয়া কেমন থাকে

কার্তিক মাস বাংলায় হেমন্ত ঋতুর প্রথম মাস, যা সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে পড়ে। এই সময়ের আবহাওয়ায় বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা বছরের অন্যান্য সময়ের থেকে আলাদা। কার্তিক মাসের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে তুলে ধরা হলো:

তাপমাত্রার পরিবর্তন: কার্তিক মাসে দিনের তাপমাত্রা সাধারণত আরামদায়ক থাকে, যা গড়ে প্রায় ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সূর্যের তাপ কমে আসতে শুরু করে এবং গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রাতের দিকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, যা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসে। এই সময়ে ঠান্ডা বাতাসের প্রভাব শুরু হয়, যা শীতের আগমনী বার্তা বহন করে।

কার্তিক-মাসে-আবহাওয়া-কেমন-থাকে

আর্দ্রতার পরিমাণ: কার্তিক মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়, ফলে আর্দ্রতা অনেকটাই কম থাকে। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে ওঠে, যেটি হেমন্তের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। দিনের বেলা আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে শুষ্ক এবং খোলামেলা হয়।

প্রাকৃতিক পরিবর্তন: মাসের শেষের দিকে বিশেষ করে ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করে। তবে এটি খুব ঘন হয় না এবং সকালে সূর্য ওঠার পর কুয়াশা দ্রুত সরে যায়। কার্তিক মাসে গাছের পাতা ঝরা শুরু হয়। বিশেষ করে শিমূল, কৃষ্ণচূড়া এবং অন্যান্য বড় গাছের পাতা ঝরে পড়তে থাকে, যা শীতের আগমনের ইঙ্গিত দেয়।

বাতাসের গতি ও দিক: কার্তিক মাসে বাতাসের গতি একটু বেড়ে যায় এবং এটি বেশ শুষ্ক হয়। উত্তরের ঠান্ডা বাতাস ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে বইতে শুরু করে। এই ঠান্ডা হাওয়া রাতের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং শীতের অনুভূতি আনতে শুরু করে।

কৃষি কাজের জন্য উপযুক্ত সময়: এই সময়ে আবহাওয়া কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়। ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়, এবং অন্যান্য রবি ফসলের বীজ বপনের জন্যও এটি আদর্শ সময়। আবহাওয়া শুষ্ক ও ঠান্ডা হওয়ার কারণে কৃষিকাজ সহজ হয়।

কার্তিক মাসের যেসকল ফলমূল পাওয়া যায়

কার্তিক মাসে বাংলায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল পাওয়া যায়, যা ঋতুগত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। হেমন্ত ঋতুর শুরুতে কার্তিক মাসের আবহাওয়া শুষ্ক ও মৃদু ঠান্ডা হওয়ায় বেশ কিছু মৌসুমি ফল বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। নিচে কার্তিক মাসে পাওয়া যেসব ফলমূলের কথা উল্লেখ করা হলো:

আমলকী: কার্তিক মাসে আমলকী প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই ফলটি উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমলকী সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয় বা আচার, মোরব্বা, এবং আমলকীর গুঁড়ো তৈরি করা হয়।

পেয়ারা: পেয়ারা এই সময়ে বেশ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এটি অনেকেরই প্রিয় ফল। পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন সি এবং আঁশ থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা পাওয়া যায়, যেমন গোলাপি ও সাদা পেয়ারা।

আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা। বিটরুটের অপকারিতা ও ব্যবহার।

জলপাই: কার্তিক মাসে জলপাইয়ের মৌসুম শুরু হয়। জলপাই কাঁচা খাওয়া হয়, তবে এর আচারও অনেক জনপ্রিয়। জলপাই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

কামরাঙা: কামরাঙা বা স্টার ফল এই সময়ে পাওয়া যায়। এটি টক-মিষ্টি স্বাদের একটি ফল এবং এর বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি স্যালাড, জুস, বা আচার তৈরি করতেও ব্যবহৃত হয়।

শীতকালীন আপেল কুল (বড়ই): বড়ই বা আপেল কুল ফলটি কার্তিক মাস থেকে শুরু করে শীতকালে পাওয়া যায়। এটি একটি মিষ্টি এবং খসখসে ফল যা কাঁচা বা আচার বানিয়ে খাওয়া হয়।

কাঁঠাল-চাঁপা কলা: এই সময়ে কাঁঠাল-চাঁপা নামের ছোট আকৃতির মিষ্টি কলা বাজারে পাওয়া যায়। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।

আতা ফল: আতা বা শরিফা ফল এই সময়ে বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। এই ফলটি মিষ্টি ও সুস্বাদু এবং এটি ভিটামিন ও খনিজের একটি ভালো উৎস।

নারকেল: এই সময়ে পাকা নারকেলও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন মিষ্টান্ন, পিঠা-পুলি এবং অন্যান্য খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

কলা: কলা সারা বছর পাওয়া গেলেও, কার্তিক মাসে বিভিন্ন জাতের কলা যেমন চাঁপা কলা, সবরি কলা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে বাজারে পাওয়া যায়।

কার্তিক মাসের যেসকল সবজি পাওয়া যায়

কার্তিক মাস হেমন্ত ঋতুর প্রথম মাস এবং এ সময় বাংলার কৃষকরা নতুন শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেন। কার্তিক মাসে বাজারে কিছু গ্রীষ্মকালীন সবজির শেষ দেখা যায় এবং শীতকালীন সবজির আগমন ঘটে। এই সময়ে পাওয়া যেসব সবজির কথা উল্লেখযোগ্য সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

ফুলকপি: কার্তিক মাসে ফুলকপি চাষ শুরু হয় এবং বাজারে তাজা ফুলকপি পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি সবজি, যা তরকারি, ভাজি এবং অন্যান্য বিভিন্ন পদের জন্য ব্যবহার করা হয়।

বাঁধাকপি: এই সময়ে বাঁধাকপির আগমন ঘটে। বাঁধাকপি শীতকালীন সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয় এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে ও সি। এটি সালাদ, ভাজি, এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

মুলা: মুলা একটি সাধারণ শীতকালীন সবজি যা কার্তিক মাস থেকে শুরু করে বাজারে পাওয়া যায়। এটি সালাদ, ভাজি, এবং তরকারিতে ব্যবহৃত হয়। মুলা ফাইবার ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ।

শিম: শিমের সময় শুরু হয় কার্তিক মাস থেকে। এটি প্রোটিন ও আঁশের একটি ভালো উৎস এবং এটি বিভিন্ন তরকারি ও ভাজিতে ব্যবহৃত হয়।

পালং শাক: পালং শাকের মৌসুম কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়। পালং শাক আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর সবজি, যা সালাদ, স্যুপ এবং বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়।

লাল শাক: কার্তিক মাসে লাল শাকও বাজারে দেখা যায়। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আয়রন সমৃদ্ধ। লাল শাক ভাজি, স্যুপ এবং অন্যান্য পদে ব্যবহার করা হয়।

লাউ: লাউ বা কদু এই সময়ে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি হালকা সবজি হিসেবে পরিচিত এবং এটি স্যুপ, ভাজি এবং তরকারি হিসেবে রান্না করা হয়।

আরো পড়ুন: আপেল সিডার ভিনেগারের কার্যকরী উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

করলা: করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও এর শেষ মৌসুম কার্তিক মাস পর্যন্ত থাকে। করলা স্বাস্থ্যকর এবং রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে মনে করা হয়।

কুমড়ো: মিষ্টি কুমড়ো এবং লাউ কুমড়ো দুটোই কার্তিক মাসে পাওয়া যায়। কুমড়ো স্বাদে মিষ্টি এবং পুষ্টিতে ভরপুর একটি সবজি।

বরবটি: বরবটির শেষ মৌসুমও কার্তিক মাস। এটি বিভিন্ন তরকারি ও সালাদে ব্যবহৃত হয় এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।

গাজর: গাজরের আগমন কার্তিক মাস থেকেই শুরু হয়। এটি ভিটামিন এ-এর অন্যতম প্রধান উৎস এবং সালাদ, জুস এবং রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

কার্তিক মাসের উল্লেখযোগ্য খাবারসমূহ

কার্তিক মাস বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই মাসে নতুন ধান কাটা শুরু হয় এবং বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলমূল ও সবজি বাজারে আসে, যা থেকে বিভিন্ন সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করা হয়। কার্তিক মাসের বিশেষ আবহাওয়া এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবের কারণে কিছু বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়। নিচে কার্তিক মাসের উল্লেখযোগ্য খাবারসমূহের তালিকা ও বিবরণ দেওয়া হলো:

নবান্নের পিঠা: কার্তিক মাসে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে "নবান্ন উৎসব" পালন করা হয়, যেখানে নতুন চাল থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পিঠা অন্যতম আকর্ষণ। এর মধ্যে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, দুধ পুলি, এবং পুলি পিঠা অন্যতম। এগুলো সাধারণত চালের গুঁড়ো, নারকেল, গুড়, এবং দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়।

খেজুরের রসের পায়েস: কার্তিক মাস থেকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হয়। এই তাজা রস দিয়ে পায়েস তৈরি করা হয়, যা খুবই সুস্বাদু এবং জনপ্রিয়। এটি চিঁড়া বা চাল, দুধ এবং খেজুরের রসের সংমিশ্রনে তৈরি হয়।

শীতকালীন সবজি দিয়ে খিচুড়ি: কার্তিক মাসে নতুন ধান এবং শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপি, মটরশুঁটি, শিম, গাজর ইত্যাদি মিশিয়ে খিচুড়ি তৈরি করা হয়। এই সবজির মিশ্রণে খিচুড়ি স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর হয়।

সরষে ইলিশ: ইলিশ মাছের মৌসুম কার্তিক মাস পর্যন্ত থাকে এবং এ সময় সরষে ইলিশ খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। সরষে ইলিশের গ্রেভি সরষের বাটা, লঙ্কা ও সরিষার তেলে রান্না করা হয় যা ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।

নারকেল নাড়ু ও গুড়ের নাড়ু: কার্তিক মাসে বিভিন্ন ধরনের নাড়ু তৈরি করা হয়। নারকেল নাড়ু তৈরি হয় নারকেল কোরানো, গুড় ও খেজুরের গুড় দিয়ে। এই মিষ্টি নাড়ুগুলি পুজো-পার্বণে এবং উৎসবে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয়।

আলুর দম: কার্তিক মাসে নতুন আলু পাওয়া যায়, এবং এই সময়ে আলুর দম তৈরি করা খুব জনপ্রিয়। এটি মশলাদার একটি পদ, যা লুচি বা পরোটার সঙ্গে খাওয়া হয়।

ডালপুরি ও সবজি তরকারি: ডালপুরি একটি জনপ্রিয় খাবার যা মুগ ডালের পুর দিয়ে তৈরি করা হয় এবং গরম তেলে ভেজে পরিবেশন করা হয়। ডালপুরি সাধারণত সবজি তরকারি বা আলুর দমের সাথে খাওয়া হয়।

তিলের নাড়ু: তিলের নাড়ু একটি জনপ্রিয় মিষ্টি যা তিল, চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি বিশেষ করে হেমন্ত ঋতুর শুরুর দিকে খুবই প্রচলিত।

কার্তিক মাসের সতর্কতা

কার্তিক মাসের আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে স্বাস্থ্যের প্রতি কিছুটা সতর্ক থাকা জরুরি। এ মাসে শীতের আগমন শুরু হয় এবং তাপমাত্রা কমতে শুরু করে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, এই সময়ে পোকামাকড় এবং রোগজীবাণুর সক্রিয়তা বেড়ে যায়। তাই কার্তিক মাসে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিচে কার্তিক মাসে যে সতর্কতাগুলো মেনে চলা উচিত, তা উল্লেখ করা হলো:

আবহাওয়া পরিবর্তনের সতর্কতা: কার্তিক মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য থাকে। দিনে  সাধারণত গরম অনুভূত হয় কিন্তু রাতগুলো বেশ ঠান্ডা হয়। তাই হালকা গরম কাপড় বা চাদর সঙ্গে রাখা উচিত, বিশেষ করে সকালে ও রাতে বাইরে গেলে। তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় ঠান্ডা, কাশি এবং সর্দির সমস্যা বাড়তে পারে। ঠান্ডা পানি পান এড়িয়ে চলুন এবং যথেষ্ট গরম পোশাক পরুন।

কার্তিক-মাসে-সতর্কতা

খাদ্য সতর্কতা: এই সময়ে পচা ও দূষিত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এই সময়ে অনেক ফল ও সবজি সংরক্ষণ করা হয়, যা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাজা এবং পরিষ্কার সবজি ও ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

খাবারের মানের দিকে খেয়াল রাখা: নবান্নের সময় নতুন চালের তৈরি পিঠা-পায়েস বেশি খাওয়া হয়। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং খাওয়ার আগে খাবারের মান যাচাই করুন।

পানির সতর্কতা: কার্তিক মাসে পানিতে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। তাই বিশুদ্ধ এবং ফিল্টার করা পানি পান করুন। যদি প্রয়োজন হয়, পানির আগে ফুটিয়ে নিন।

রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যবিধি: এই সময়ে ঠান্ডা ও ফ্লুর মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তাই নিয়মিত হাত ধোয়া, জীবাণুমুক্ত রাখা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

পোকামাকড় থেকে সতর্ক থাকা: কার্তিক মাসে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি মশা বাহিত রোগের আশঙ্কা থাকে। মশারি ব্যবহার করা, মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহার করা এবং চারপাশ পরিষ্কার রাখা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এছাড়া, সবুজ শাকসবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

পর্যাপ্ত পানি পান: শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।

ফসল ও কৃষিকাজের সতর্কতা: কার্তিক মাসে ফসল কাটার সময়, কৃষকদের উচিত সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকা।

কীটনাশকের ব্যবহার: এই সময়ে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তবে কীটনাশক ব্যবহারের সময় সঠিক নির্দেশিকা মেনে চলা এবং শরীর সুরক্ষিত রাখা উচিত।

ভ্রমণ সতর্কতা: কার্তিক মাসে উৎসব ও মেলা হয়, যা ভ্রমণের একটি বড় আকর্ষণ। ভ্রমণে যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ, গরম কাপড় এবং স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন।

লেখকের  মতামত: কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪

কার্তিক মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪ এই আর্টিকেলটি যারা পড়েছেন তারা নিশ্চয় জানতে পেরেছেন আজ কার্তিক মাসের কত তারিখ? কার্তিক মাস বাংলা পঞ্জিকার সপ্তম মাস, যা সাধারণত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে পড়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত, যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, উপবাস, এবং পূজা-পার্বণ পালন করা হয়। কার্তিক মাস কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রধানত ফসল কাটার মৌসুম। ধানসহ অন্যান্য প্রধান ফসল এই সময়ে ঘরে তোলা হয়, যা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কার্তিক মাসের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, এবং কৃষি গুরুত্ব একে বাংলার মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ করে তুলেছে। এটি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক চেতনা এবং আচার-অনুষ্ঠানের জন্যই নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক মহিমান্বিত সময়। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url