গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা। বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। আবার আমরা অনেকেই জানি না বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের আজকের আর্টিকেল বিটরুট নিয়ে।

গর্ভাবস্থায়-বিটরুটের-উপকারিতা

বিটরুট মূলত একটি সবজি। পক্ষান্তরে একটি সুপার ফুড। আপনারা যারা এই সবজিটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেল। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে আশা রাখি। 

পোস্ট সূচীপত্র: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা

বিটরুট পরিচিতি

বিটরুট (Beetroot) একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর শাকসবজি। যা এর উজ্জ্বল লাল বর্ণ এবং মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। এটি বিভিন্ন ধরণের রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এর পুষ্টিগুণের কারণে স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে বেশ পছন্দনীয়। বিটরুট বিভিন্ন রকম সালাদ, স্যুপ, জুস এবং মেইন কোর্সের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিটরুট একটি মূলজাতীয় শাকসবজি যা বৈজ্ঞানিকভাবে Beta vulgaris নামে পরিচিত। 

এটি চেনার প্রধান বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল লাল বা বেগুনি বর্ণ এবং গোলাকার আকার। এটি সাধারণত মাটির নিচে বৃদ্ধি পায় এবং মূল হিসেবে কাটা হয়। বিটরুটের পাশাপাশি এর পাতা এবং ডাঁটাও ভক্ষণযোগ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, এবং ফলেট পাওয়া যায়। এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।বিটরুট বিটালেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা কোষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

বিটরুটে কোন কোন পুষ্টি উপাদান কি পরিমানে আছে

গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা অনেক পরিমানে আছে। বিটরুটে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা বিটরুটে থাকা পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ উল্লেখ করা হলো:

ক্রমিক পুষ্টিগুনের নাম পুষ্টিগুনের পরিমান
ক্যালোরি ৪৩ ক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেড ৯.৬ গ্রাম
চিনি ৬.৮ গ্রাম
ফাইবার ২.৮ গ্রাম
প্রোটিন ১.৬ গ্রাম
ফ্যাট ০.২ গ্রাম
ভিটামিন বি৯ ১০৯ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি ৪.৯ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৩২৫ মিলিগ্রাম
১০ ম্যাগনেসিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম
১১ আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম
১২ ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম
১৩ ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম
১৪ জিঙ্ক ০.৩৫ মিলিগ্রাম

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাদান

বিটরুটের রং ও পুষ্টিগুণের জন্য দায়ী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রদাহ হ্রাস করতে ও কোষের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। বিটরুটে উপস্থিত নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া মায়ের এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা গর্ভাবস্থার সময় বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সুবিধা প্রদান করে থাকে। নিচে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

ফলেটের ভালো উৎস:  র্ভাবস্থায় ফলেট (ফোলিক অ্যাসিড) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। বিটরুটে উচ্চ মাত্রায় ফলেট থাকে, যা গর্ভকালীন নিউরাল টিউবের ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধিতে সহায়ক।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে : গর্ভাবস্থায় আয়রনের প্রয়োজন বেড়ে যায়, কারণ এটি মায়ের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে এবং শিশুর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে। বিটরুট আয়রনের ভালো উৎস, যা রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং রক্তের সঠিক প্রবাহ নিশ্চিত করে।

আরো পড়ুন: কাজু বাদামের উপকারিতা। জেনে নিন কাজু বাদামের ব্যবহার ও অপকারিতা।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ (প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া) মারাত্মক হতে পারে। বিটরুটে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।

ডিটক্সিফিকেশন বা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ: বিটরুট লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে; তাই বিটরুট খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য ভীষন উপকারী।

হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে: গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। বিটরুটে থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এটি অন্ত্রের গতি বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর পরিপাকতন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে: গর্ভাবস্থায় ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং বিটালেইন মায়ের ইমিউন সিস্টেম মজবুত করতে সহায়তা করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।

শক্তি বৃদ্ধি এবং ক্লান্তি দূর করে: গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা থাকে এবং ক্লান্তি প্রায়ই দেখা দেয়। বিটরুট প্রাকৃতিক শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস, যা মায়ের শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: গর্ভাবস্থায় হাড়ের গঠন এবং শক্তির জন্য ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজন হয়। বিটরুটে এই উপাদানগুলো রয়েছে, যা মায়ের হাড় মজবুত রাখতে এবং শিশুর হাড়ের সঠিক গঠন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে: গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। বিটরুটে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক মায়ের ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়ক এবং ত্বকের সমস্যা দূর করে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা অনেক হবার পরও একটি খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া মা এবং শিশুর জন্য উপকারী কারণ এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান, যেমন—ফলেট, আয়রন, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে, কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত যাতে গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর কোনো ঝুঁকি না থাকে। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার সময় যে বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

পরিমিত পরিমাণে খাওয়া: বিটরুট খাওয়া পুষ্টিকর হলেও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের বিটরুট বা এক গ্লাস বিটরুট জুস খাওয়া যথেষ্ট।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সতর্ক থাকা: বিটরুট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেসব গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ কম থাকে (হাইপোটেনশন), তাদের বিটরুট খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

কিডনি সমস্যা থাকলে বিশেষ সতর্কতা: বিটরুটে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা কিডনির পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভাবস্থায় যাদের কিডনি সমস্যা আছে বা কিডনি স্টোনের ইতিহাস রয়েছে, তাদের বিটরুট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায়-বিটরুটের-খাওয়ার-সতর্কতা

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (GI) সমস্যা বিবেচনা করা: বিটরুটে ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, বা ডায়রিয়া হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি হতে পারে, তাই ফাইবারের পরিমাণ সঠিকভাবে বজায় রাখা জরুরি।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে বিটরুট খাওয়ার পর পরিমিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। যদিও বিটরুটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

এলার্জির সম্ভাবনা যাচাই: কিছু মানুষের বিটরুটে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যার ফলে ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি, ফোলা, অথবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এমন অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে বিটরুট খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দ্রুত ওজন বৃদ্ধি এড়াতে: বিটরুট একটি পুষ্টিকর খাদ্য হলেও অতিরিক্ত খেলে ক্যালোরি গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখে বিটরুট খাওয়া উচিত।

ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া: গর্ভাবস্থায় যেকোনো নতুন খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করার আগে, বিশেষ করে যদি পূর্বের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বিরল ক্ষেত্রে ত্বকের হলুদভাব (জন্ডিস) বাড়ানো: গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার ক্ষেত্রে বিটরুটের রঞ্জক ত্বকের হলুদভাব বাড়াতে পারে, যদিও এটি খুব বিরল।

বিটরুট ব্যবহারের উপায়সমূহ

বিটরুটের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে এটি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটি বিভিন্ন ধরণের ডিশে ব্যবহার করা যায়—কাঁচা, রান্না করা, রোস্ট করা, বা জুস হিসেবে। নিচে বিটরুট ব্যবহারের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো:

কাঁচা বিটরুট সালাদ: বিটরুট কাঁচা খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর। সালাদে বিটরুট কুঁচি করে যোগ করা যায়। এতে লেবুর রস, অলিভ অয়েল, এবং অন্যান্য শাকসবজি (যেমন, গাজর, শসা, টমেটো) মিশিয়ে একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সালাদ তৈরি করা যায়।

আরো পড়ুন: নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা। নিমপাতা ব্যবহারের নিয়ম।

বিটরুট জুস: বিটরুটের জুস খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর। এটি গাজর, আপেল, আদা বা কমলার সাথে মিশিয়ে একটি পুষ্টিকর জুস তৈরি করা যায়। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

বিটরুট স্যুপ (বর্শ্চ):  বর্শ্চ (Borscht) একটি জনপ্রিয় রাশিয়ান এবং পূর্ব ইউরোপীয় স্যুপ যা বিটরুট দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি গরুর মাংস, পেঁয়াজ, আলু এবং টমেটোর সাথে রান্না করা হয় এবং এর একটি বিশেষ লাল রঙ থাকে।

রোস্টেড বিটরুট : বিটরুট রোস্ট করা হলে এর প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ আরো বেশি প্রকাশিত হয়। বিটরুটের টুকরা কেটে অলিভ অয়েল, লবণ এবং মরিচ মিশিয়ে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট ধরে রোস্ট করা যায়। এটি একটি চমৎকার সাইড ডিশ হিসেবে পরিবেশন করা যায়।

বিটরুট চিপস: স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বিটরুট চিপস তৈরি করা যায়। পাতলা বিটরুটের স্লাইস করে অলিভ অয়েল এবং একটু লবণ ছিটিয়ে ওভেনে বেক করা হয়। এটি স্বাস্থ্যকর আলুর চিপসের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।

বিটরুট ডিপ (হুমাস): বিটরুট দিয়ে হুমাস তৈরি করা যায় যা পিটা ব্রেড, কাঁচা সবজি বা স্যান্ডউইচের সাথে পরিবেশন করা যায়। এটি সাধারণত চানা, তেহিনা, রসুন এবং বিটরুটের সাথে মিশিয়ে তৈরি হয়।

বিটরুট কারি: বিটরুট দিয়ে সুস্বাদু কারি তৈরি করা যায়। এটি ভারতীয় রান্নার একটি অংশ, যেখানে বিটরুট কুচি করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এবং বিভিন্ন মসলার সাথে রান্না করা হয়। ভাত বা রুটি দিয়ে এটি পরিবেশন করা যায়।

বিটরুট পিকল: বিটরুট পিকল বা আচার খুবই মজাদার এবং সংরক্ষণযোগ্য। এটি তৈরি করতে বিটরুট সেদ্ধ করে তাতে ভিনেগার, চিনি, লবণ, এবং মশলা মেশানো হয় এবং কয়েকদিন ধরে রেখে খাওয়া যায়।

বিটরুট স্মুদি: বিটরুট, আপেল, গাজর, কলা, এবং একটু মধু দিয়ে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর স্মুদি তৈরি করা যায়। এটি সকালের নাস্তায় বা ব্যায়াম পরবর্তী খাবার হিসেবে চমৎকার।

বিটরুট পাস্তা সস: বিটরুট দিয়ে পাস্তার জন্য ক্রিমি সস তৈরি করা যায়। বিটরুট সেদ্ধ করে তাতে ক্রিম বা গ্রীক দই মিশিয়ে ব্লেন্ড করা হয়। এটি পাস্তার সাথে মিশিয়ে একটি ভিন্নধর্মী এবং সুস্বাদু পাস্তা তৈরি করা যায়।

বিটরুটের ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা 

শুধু যে গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা পাওয়া যায় তা নয়। বরং স্বাভাবিক অবস্থাতেও এর অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিটরুট পুষ্টিতে ভরপুর একটি শাকসবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য অসংখ্য উপকার নিয়ে আসে। এর রঙিন চেহারা ও সুস্বাদু স্বাদের পাশাপাশি, বিটরুটের রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিচে বিটরুটের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: বিটরুটে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত নাইট্রেট রক্তনালী প্রসারিত করতে সাহায্য করে। এটি শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়ে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিটরুটের রস পান করলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকরী: বিটরুট আয়রনের একটি ভালো উৎস, যা শরীরে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। আয়রন রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

হার্ট ভালো রাখে: বিটরুটে থাকা নাইট্রেট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে এবং প্লাক জমাট বাঁধা রোধ করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটালেইন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা।

প্রদাহ দূর করে: বিটরুটে থাকা বিটালেইন প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে সহায়তা করে থাকে। এটি আর্থ্রাইটিস এবং প্রদাহজনিত অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়: বিটরুটে প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং অন্ত্রের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কার্যকর।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে: বিটরুটে উপস্থিত নাইট্রেট মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং জ্ঞানীয় কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে বিটরুট উপকারী।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে: বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটালেইন এবং ভিটামিন সি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক এবং বিশেষত কোলন, পেট এবং ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।

ডিটক্সিফিকেশন (শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ): বিটরুটের বিটালেইন লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করে। এটি লিভারের এনজাইমগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সহজে অপসারণ করে।

শক্তি বৃদ্ধি করে: বিটরুটে প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। অ্যাথলেটরা প্রায়ই বিটরুটের রস পান করেন কারণ এটি সহনশীলতা বাড়াতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে:  বিটরুট ক্যালোরিতে কম কিন্তু ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি পেট ভরাট রাখে এবং ক্ষুধার্ত হওয়ার সময় বাড়ায়, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট খাওয়ার আগে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী। বিটরুট খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং এটি বিভিন্নভাবে রান্না করে বা কাঁচা খেয়ে উপভোগ করা যায়। বিটরুট খাওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত, যেমন—পুষ্টিগুণ বজায় রাখা, সঠিক পরিমাণে খাওয়া, এবং স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানো। নিচে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কাঁচা বিটরুট খাওয়া: কাঁচা বিটরুটের পুষ্টিগুণ বেশি থাকে কারণ রান্নার সময় কিছু পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। কাঁচা বিটরুট সালাদ, স্মুদি বা জুস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা বিটরুট খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং উপযুক্তভাবে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।

রোস্ট করা বিটরুট: বিটরুট রোস্ট করলে এর প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ আরও বেশি প্রকাশ পায়। রোস্ট করার জন্য বিটরুটের খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন। এরপর অলিভ অয়েল, লবণ, এবং মরিচ মিশিয়ে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওভেনে প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট রোস্ট করুন। এটি সাইড ডিশ হিসেবে চমৎকার।

বিটরুট জুস বা স্মুদি: বিটরুটের জুস খুবই জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর। এক গ্লাস বিটরুট জুস প্রস্তুত করতে বিটরুটের সাথে গাজর, আপেল, আদা, এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। সকালে বা ব্যায়াম পরবর্তী সময়ে এই জুস খেলে শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি ও পুষ্টি যোগায়। তবে অতিরিক্ত বিটরুট জুস পান করা উচিত নয়, কারণ এতে উচ্চ অক্সালেটের কারণে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিটরুট সেদ্ধ করা বা স্টিম করা: বিটরুটকে সেদ্ধ বা স্টিম করে খেলে এটি হজমে সহজ হয় এবং পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই অক্ষুণ্ণ থাকে। বিটরুট সেদ্ধ করতে চাইলে খোসা না ছাড়িয়ে সেদ্ধ করুন, এতে রং এবং পুষ্টি উপাদান সুরক্ষিত থাকে। পরে এটি কেটে স্যালাড বা সাইড ডিশ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

বিটরুট স্যুপ (বর্শ্চ): বর্শ্চ (Borscht) একটি রাশিয়ান স্যুপ যা বিটরুট দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি গরম খাবার হিসেবে দুপুর বা রাতের খাবারে খাওয়া যেতে পারে। এতে অন্যান্য সবজি, মাংস বা ডাল যোগ করে পুষ্টির মান বাড়ানো যায়।

বিটরুট-খাওয়ার-নিয়ম

বিটরুট আচার বা পিকল: বিটরুটের আচার বা পিকল খুবই মজাদার এবং সহজে তৈরি করা যায়। বিটরুট কেটে ভিনেগার, লবণ, এবং মশলা মিশিয়ে রেখে দিলেই আচার প্রস্তুত হয়। এটি খাবারের সাথে সাইড ডিশ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

বিটরুট চিপস: স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে বিটরুট চিপস তৈরি করা যায়। পাতলা বিটরুটের স্লাইস করে অলিভ অয়েল এবং একটু লবণ ছিটিয়ে ওভেনে বেক করা হয়। এটি স্বাস্থ্যকর আলুর চিপসের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া: বিটরুট পুষ্টিতে ভরপুর হলেও অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দৈনিক এক গ্লাস বিটরুট জুস বা ১-২টি মাঝারি আকারের বিটরুট খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে কিডনি স্টোন, বিটিউরিয়া (লাল প্রস্রাব), এবং রক্তচাপ হ্রাস হতে পারে।

স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করা: যারা কিডনি স্টোন, উচ্চ অক্সালেট, অথবা কম রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বিটরুট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা

যদিও বিটরুট অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাবার, তবুও এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাই বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। বিটরুটের কিছু অপকারিতা বা ঝুঁকি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বৃদ্ধি: বিটরুটে অক্সালেটের পরিমাণ অনেক বেশি, যা কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন (পাথর) তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য বিটরুট খাওয়া সীমিত রাখা উচিত এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিটিউরিয়া (লাল প্রস্রাব): বিটরুট খাওয়ার পর অনেকের প্রস্রাবের রং লাল বা গোলাপি হয়ে যেতে পারে, যা বিটিউরিয়া নামে পরিচিত। এটি ক্ষতিকর নয়, তবে অনেকেই এটি দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। এটি মূলত বিটরুটে থাকা বিটালেইন নামক রঞ্জকের কারণে হয় এবং সাধারণত ক্ষতিকর নয়।

রক্তচাপ অত্যধিক কমানো: বিটরুটে থাকা নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। তবে, যাদের রক্তচাপ ইতিমধ্যেই কম (হাইপোটেনশন), তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এটি রক্তচাপ আরো কমিয়ে দিতে পারে।

আরো পড়ুন: আপেল সিডার ভিনেগারের কার্যকরী উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষের বিটরুটে অ্যালার্জি হতে পারে। এর ফলে ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি, ফোলা, অথবা গলায় চুলকানি হতে পারে। যাদের বিটরুট বা অন্য কোনো রুট শাকসবজির অ্যালার্জি আছে, তাদের বিটরুট খাওয়ার আগে সতর্ক থাকা উচিত।

ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে: যদিও বিটরুটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম, তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের বিটরুট খাওয়ার পর পরিমিত পরিমাণে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।

পেটে গ্যাস বা ফুলে যাওয়া: বিটরুটে ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে অতিরিক্ত বিটরুট খেলে পেটে গ্যাস জমা হওয়া বা পেট ফাঁপা হতে পারে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আয়রন শোষণে বাধা: বিটরুটে অক্সালেটের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এটি আয়রনের শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা আয়রন ঘাটতিতে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি একটি সমস্যা হতে পারে।

পেটের সমস্যা বা ডায়রিয়া: অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়া পেটে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, অথবা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। এটি বিশেষত তখন ঘটে যখন একজন ব্যক্তি হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিমাণে বিটরুট খাওয়া শুরু করেন।

রঙিন মল: বিটরুট খাওয়ার পরে মলের রং পরিবর্তিত হয়ে লাল বা গোলাপি হয়ে যেতে পারে, যা অনেকে ভয়ঙ্কর মনে করতে পারেন। যদিও এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে মলের রং পরিবর্তনের কারণে ভীতি হতে পারে।

ক্যালসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা: অক্সালেটের উচ্চ মাত্রা ক্যালসিয়ামকে দেহ থেকে বের করে দিতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের অভাব বা হাড়ের ঘনত্বের সমস্যা যাদের আছে, তাদের সতর্ক থাকা উচিত।

বিটরুট খাওয়ার সতর্কতা

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা থাকলে এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। বিটরুট খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে যারা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা বা শারীরিক অবস্থার মধ্যে আছেন, তাদের জন্য বিটরুট খাওয়ার আগে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। নিচে বিটরুট খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা উল্লেখ করা হলো:

অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা: বিটরুট পুষ্টিতে ভরপুর হলেও অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে কিডনি স্টোন, বিটিউরিয়া (লাল প্রস্রাব), এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। পরিমিত পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ—প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি আকারের বিটরুট বা এক গ্লাস বিটরুট জুস যথেষ্ট।

কিডনির সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকা: বিটরুটে অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকায় এটি কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন (পাথর) তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বা কিডনির কোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের বিটরুট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তচাপ কম হলে সতর্ক থাকা: বিটরুট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ভালো। তবে, যাদের রক্তচাপ কম (হাইপোটেনশন), তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। বিটরুট রক্তচাপ আরো কমিয়ে দিতে পারে, তাই এ ধরনের ব্যক্তিদের বিটরুট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়া: বিটরুটে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বিটরুট খাওয়া উচিত এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

এলার্জির সমস্যা থাকলে: কিছু মানুষের বিটরুটে অ্যালার্জি হতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বকের র‍্যাশ, চুলকানি, ফোলা, বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যদি বিটরুট খাওয়ার পর এরকম কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া: গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিটরুট উপকারী হলেও অতিরিক্ত খেলে নিম্ন রক্তচাপ বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে। তাই, গর্ভবতী মায়েদের পরিমিত পরিমাণে বিটরুট খাওয়া উচিত এবং কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঙিন মল এবং প্রস্রাব সম্পর্কে সচেতন থাকা: বিটরুট খাওয়ার পর মল এবং প্রস্রাবের রং লালচে হয়ে যেতে পারে। যদিও এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে যদি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা যেমন পেট ব্যথা, জ্বর ইত্যাদির সাথে ঘটে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অ্যান্টি-কোয়াগুলান্ট বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করলে:  বিটরুটের উচ্চ ভিটামিন কে রক্তের ক্লটিং প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা বিটরুট খাওয়ার আগে ডাক্তারি পরামর্শ নিন।

লেখকের মতামত: গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় বিটরুটের উপকারিতা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বিটরুট শুধুমাত্র স্বাদের দিক থেকে নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অসাধারণ একটি সবজী। এটি শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকার বয়ে নিয়ে আসে এবং সুস্থ ও সজীব জীবনযাপনে সহায়তা করে থাকে। বিটরুটকে আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে পারি। এর পুষ্টিগুন ও  স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে যায়। 

এটি আপনি আপনার ডায়েটে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে সংযোজন করতে পারেন। বিটরুটের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা অনেক, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। আপনি বিটরুট খাওয়া শুরু করার পর যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হনে তবে আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে  একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শে এটি খাওয়া সমীচীন হবে। আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url