ত্রিফলার উপকারিতা | ত্রিফলা যেসব রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে

ত্রিফলা হলো একটি ভেষজ উপাদান। এটি মানুষের দেহের বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ত্রিফলা মানুষের শরীরে রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আজকে আপনাদেরকে ত্রিফলা  সম্পর্কে জানাতে চলেছি।

ত্রিফলা-যেসব-রোগে-ব্যবহার-হয়ে-থাকে

ত্রিফলা প্রাচীনকাল থেকেই একটি প্রচলিত আয়ুর্বেদিক ঔষধ। এটি নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনি ত্রিফলা দিয়ে কি কি রোগ নিয়াময় করতে পারবেন বা রোগ প্রতিরোধ করতে পারবেন তা নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল।

পোস্ট সূচীপত্র

ত্রিফলা কি

ত্রিফলা হল একটি প্রচলিত আয়ুর্বেদিক ভেষজ উপাদান, যা তিনটি ফলের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। আমলকী , বহেড়া এবং হরীতকী এই তিনটি ফল একত্রে মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যা বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ত্রিফলার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, যেমন:

 ত্রিফলা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ক। নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ত্রিফলা ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। ত্রিফলা মেটাবোলিজম বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন | বাসক পাতা খাওয়ার নিয়ম

ত্রিফলার উপাদানগুলো তাদের নিজস্ব গুণাবলীর জন্য পরিচিত এবং একত্রে মিশিয়ে ত্রিফলা তৈরি করা হয়, যা সমন্বিত উপকারিতা প্রদান করে। ত্রিফলা সম্পর্কে আরও কিছু জানার আগে এই তিন ফল নিয়ে জানা দরকার। এখন আমরা এই তিন ফল অর্থ্যাৎ আমলকি, হরীতকি ও বহেরা সম্পর্কে জানব।

আমলকির  পরিচয় ও বৈশিষ্ট

আমলকি, যা আমলা নামেও পরিচিত, আয়ুর্বেদিক ওষুধে বহুল ব্যবহৃত একটি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus Emblica. এটি ফাইলান্থসি পরিবারের একপ্রকার  ভেষজ ফল। এরা রোমশ বিহীন বৃক্ষের অন্তর্ভূক্ত। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম আমলক। এটি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। যেমন:

নেপালি ভাষায় আমলা, পাঞ্জাবী ভাষায় আওলা, তেলুগু ভাষায় রাসি উসরি, মালায়ালম ভাষায় নিলিক্কা, আরবি ভাষায় হালিলাজ, গুজরাটি ভাষায় আমলা, চীনা ভাষায় আনমলি, চট্রগ্রামের ভাষায় অলতি ইত্যাদি নামে পরিচিত।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে আমলকিতে পেয়ারার চেয়ে তিন গুন ও কাগজি লেবুর তুলনায় ১০ গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুন, আপেলের চেয়ে ১২০ গুন, আমের চেয়ে ২৪ গুন এবং কলার চেয়ে ৬০ গুন বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকি তাজা ফল, শুকনা ফল, জুস, পাউডার এবং তেল আকারে ব্যবহৃত হয়।

আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করতে পারে।  কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্যানক্রিয়াটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্থ প্যানক্রিয়াস এর ক্ষত সারাতে এর উপকারিতা পাওয়া গেছে। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও আরও অনেক উপকার আমলকি থেকে পাওয়া যায়। যেমন:

  • আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
  • বমি বন্ধে কাজ করে।
  • দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
  • এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।
  • এটি দাঁত,চুল ও ত্বক ভাল রাখে।
  • এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল,রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • বহুমূত্র রোগে এটি উপকারী।
  • চোখ উঠলে কাঁচা আমলকীর রস দিনে ২ ফোটা করে দুই বার দিলে ভাল আরাম পাওয়া যায়।
  • চুল ওঠা দূর করতে আমলকী বেশ উপকারী।
  • চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।
আমলকি গাছ প্রায় সারাদেশে পাওয়া যায়। এটি প্রধানত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে চাষ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে অনেক দেশেই এই গাছগুলো জন্মে থাকে। বর্তমানে পার্ক, উদ্যান, বাগান বা প্রাকৃতিক অরন্য জায়গায় এই গাছের চারা রোপন করা হচ্ছে। যা পার্ক, উদ্যান বা বাগানগুলোতে শোভা বৃদ্ধি করছে।

হরিতিকর পরিচয় ও বৈশিষ্ট

হরিতকী একটি ভেষক উদ্ভিদ। হরিতকি, যা আয়ুর্বেদে "মা ঔষধি" নামে পরিচিত এর ইংরেজি নাম black of chebulic myrobalan.  এর বৈজ্ঞানিক নামরিতকীর বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia chebula। হরিতকী একটি বৃক্ষ জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ও ভারতে এর আদি নিবাস। ভারতবর্ষের বনাঞ্চলে বা গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এই গাছ দেখা যায়। উচ্চতা ৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজাতে থাকে। বাকল গাঢ় বাদামি। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা লম্বা-চ্যাপ্টা, কিনার চোখা, লম্বায় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি।
ত্রিফলার-বৈশিষ্ট

ফুল ফোটে ডালের শেষ প্রান্তে। রং হালকা হলুদাভ সাদা। ফল লম্বাটে, মোচাকৃতি। লম্বায় প্রায় দেড় ইঞ্চি। কাঁচা ফল সবুজ, পরিপক্ব ফল হালকা হলুদ। শুকালে কালচে খয়েরি রং হয়। ফলের ত্বক ভীষণ শক্ত। এই ফল বছরের পর বছর ভালো থাকে। ফলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা লম্বা পাঁচ-ছয়টি শিরা থাকে। ফলের বাইরের আবরণ কুঁচকানো। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলের ভেতর একটিমাত্র ভীষণ শক্ত বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

হরিতকী তিতা গন্ধ বিশিষ্ট। এটি ট্যানিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্র‌ুকটোজ, সাকসিনিক অ্যাসিড এবং বিটা সাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ।মানুষের রোগ প্রতিরোধে প্রতিষেধক হিসেবে এই উদ্ভিদ বিশেষ কার্যকর। জীবাণু ও ছত্রাকজনিত রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী।এ গাছের ফল-বীজ-পাতা সবই মানুষের উপকারে আসে। হরিতকীর কাঠ খুব মজবুত। এই কাঠ ফ্রেম, খুঁটি, আসবাব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। হরিতকি সাধারণত পাউডার, ট্যাবলেট, এবং তেলের আকারে ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়ুন:কালোজিরা সর্বরোগের মহাষৌধ | কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হরিতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে, পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম রোগ, ক্ষত রোগ, কনজাংটিভাইটিস রোগে হরীতকী ব্যবহৃত হয় বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে। ইহা রক্ত চাপ এবং অন্ত্রের খিঁচুনি হ্রাস করে। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। ইহা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই ইহা নতুন ও পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজন এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 

বহেড়ার পরিচয় ও বৈশিষ্ট

বহেড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল। যার বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia bellirica. বহেড়া Combretaceae পরিবারের Terminalia গণের এক ধরনের বনজজাতীয় গাছ। গাছের মূল নাম বহেড়া বা অক্ষ হলেও এর স্থানীয় নাম বয়ড়া। এই গাছের আদি নিবাস ভারতবর্ষে। বহেড়া গাছ উচ্চতায় ৬০-১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় অর্থাৎ খুবই বড় গাছ। গাছের গুড়িও অনেক লম্বা। শীত কালে এর ফল পুষ্ট হয়, তারপর নিজ থেকেই গাছ থেকে খসে পড়ে।

এ গাছের ফল দু’রকমের হয়-এক প্রকার গোল, আরেকটি ডিম্বাকৃতির। এর ফল ও ফলের শাঁস ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের মনের প্রফুল্লতা আনার জন্য এই ফলের শাঁস খায়। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বহেড়া গাছ জন্মে। যেমন ভাওায়ালের অঞ্চল মধুপুর গড়, গাজীপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রামগড়, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের ছোটনাগপুর, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে প্রধানত এ গাছ বেশি দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম, বাঁকুড়া ও বর্ধমানের শালবনেও এ গাছ প্রচুর জন্মে। শীতের শুরুতে এই ফল সংগ্রহ করা হয়।

সাদা বা রক্ত যে কোনও আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ বহেড়া গুঁড়া খেলে উপকার পাওয়া যায়। বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ১০ গ্রাম ছাল নিয়ে পানি দিয়ে বাটুন। এক কাপ পানিতে গুলে পানি ছেঁকে নিন, এবার সে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুল ওঠা বন্ধ হয়। আধা চা-চামচ বহেড়া গুঁড়া, ঘি গরম করে তার সাথে মিশিয়ে আবার গরম করে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্যে থেকে মুক্তি পেতে হলে রোজ দু’টি করে বহেড়া বিচির শাঁস খেতে হবে। এর ফলে এই রোগ ভাল হয়। বহেড়া বিচির শাঁসের তেল বের করে শ্বেতীর ওপর লাগালে গায়ের রং অল্পদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে। বহেড়া বিচির শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে চন্দনের মতো টাকে লাগালে, টাক সেরে যায়। বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ছাল বেটে একটু গরম করে ফুলায় প্রলেপ দিলে ফুলা কমে যায়। বহেড়া বিচি বাদ দিয়ে শাঁসের গুঁড়া ডালিম পাতার রসের সাথে মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।

ত্রিফলার উপকারিতা

ত্রিফলা একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক উপাদান যা প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তিনটি ফলের সমন্বয়ে তৈরি এই মিশ্রণটি বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্রিফলার প্রধান উপকারিতা গুলি নিচে আলোচনা করা হল:

১. পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে: ত্রিফলা একটি প্রাকৃতিক রেচক (laxative) হিসেবে কাজ করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এটি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং গ্যাস, ফোলাভাব ও অম্লতা (acidity) কমায়।

২. ডিটক্সিফিকেশন: ত্রিফলা লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এটি রক্ত পরিশোধনেও সহায়ক।

৩. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ত্রিফলায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। ত্রিফলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

৪. ত্বকের যত্ন: ত্রিফলা ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ ও ত্বকের বিভিন্ন অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক।

৫. চুলের যত্ন: ত্রিফলা চুলের গুণমান বৃদ্ধি করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। এটি চুলের প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে সহায়ক।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: ত্রিফলা মেটাবোলিজম বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এটি বদহজম কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৭. চোখের যত্ন: ত্রিফলা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এটি চোখের ক্লান্তি ও শুষ্কতা কমায়।

৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ত্রিফলা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ত্রিফলার-উপকারিতা

৯. মুখের যত্নে: জীবাণুবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে মাড়ির সমস্যা, পিরিওদন্তাইটিস ও অন্যান্য মৌখিক সমস্যার বিরুদ্ধে। ক্লোরহেক্সিডাইনের সাথে মুখ ধোওয়ার তরল হিসেবে ব্যবহার করলে তা প্লাক জমা রোধ করে এবং মুখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

ত্রিফলার উপকারিতা ব্যাপক এবং এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষভাবে কার্যকর। নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে আপনি শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি পেতে পারেন।

ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম

ত্রিফলা হলো একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ওষুধ, যা তিনটি ফলের মিশ্রণ থেকে তৈরি হয়: আমলকি, বহেড়া, এবং হরীতকী। এই মিশ্রণটি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ত্রিফলা প্রধানত পাচনতন্ত্রের উন্নতি, ডিটক্সিফিকেশন, এবং ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক।ত্রিফলা খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, নিচে কিছু সাধারণ নিয়ম দেওয়া হলো:

ত্রিফলা চূর্ণ:

  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে: এক চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • রাতে শোবার আগে: রাতে শোবার আগে এক চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া ভালো।

ত্রিফলা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল:

আপনি যদি ত্রিফলা চূর্ণের স্বাদ পছন্দ না করেন, তবে ত্রিফলা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে এক বা দুইটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গ্রহণ করতে পারেন।

ত্রিফলা জুস:

ত্রিফলা চূর্ণ এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে রেখে দিন এক রাত। সকালে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে পান করতে পারেন।

ত্রিফলার সম্ভাব্য অপকারিতা

ত্রিফলা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। এটি নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে কিছু অপকারিতার কারণ হতে পারে। ত্রিফলা ব্যবহারের আগে এই অপকারিতাগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করা যায়। ত্রিফলা সাধারণত নিরাপদ হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপকারিতার কারণ হতে পারে। নিচে ত্রিফলার কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা আলোচনা করা হলো:

  • ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য: অতিরিক্ত পরিমানে খেলে ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হতে পারে।কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দীর্ঘদিন ত্রিফলা ব্যবহার করলে পাচনতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে।

  • পেটের সমস্যা: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ত্রিফলা পেটে অস্বস্তি, গ্যাস বা ফাঁপা অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে।

      আরো পড়ুন: জয়তুন তেলের উপকারিতা । জয়তুন তেল সৌন্দর্য ও সুস্থতার যোগসূত্র

  • রক্তচাপের পরিবর্তন: ত্রিফলা কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে ত্রিফলা গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • ওষুধের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া: ত্রিফলা কিছু ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, বিশেষ করে যেসব ওষুধ রক্তপাত রোধে ব্যবহৃত হয় (যেমন, অ্যাসপিরিন বা ওয়ারফারিন)।

  • গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান: গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে ত্রিফলা ব্যবহার নিরাপদ না-ও হতে পারে। এই অবস্থায় ত্রিফলা গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হরমোনের পরিবর্তন: দীর্ঘদিন ধরে ত্রিফলা অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে, যা শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

 লেখকের মতামত

ত্রিফলা একটি প্রাকৃতিক এবং বহুমুখী ওষুধ যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সঠিক নিয়মে এবং পরিমানে ত্রিফলা খেলে আপনি পাচনতন্ত্রের উন্নতি, শরীরের ডিটক্সিফিকেশন, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ত্বকের যত্ন এবং ইমিউনিটি বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন উপকারিতা পেতে পারেন। ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম মেনে সুস্থ ও সবল থাকুন।

ত্রিফলা সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের ত্রিফলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি আপনি কোনো ধরণের শারীরিক সমস্যা বা ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন, তবে ত্রিফলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আমাদের আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।

ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url