বাতাবি লেবুু নানা রোগের মহাষৌধ | বাতাবি লেবুর উপকারিতা
বাতাবি লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে আপনার অনেকে জানতে চান। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে বাতাবি লেবুর উপকারিতা, পুষ্টিগুন ইত্যাদি সম্পর্কে জানব। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
বাতাবি লেবু অনেক পুষ্টিকর একটি ফল। বাতাবি লেবু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে তোলে। তাছাড়া বাতাবি লেবু আমাদের অনেক উপকারে আসে। আজ আমরা সেই সম্পর্কেই আমাদের আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানব।
বাতাবি লেবু পরিচিতি
বাতাবি লেবুর উপকারিতার কারনে আমাদের সবার কাছে বেশ পরিচিত। বাতাবি লেবু একটি লেবু জাতীয় ফল। প্রায় সব ধরনের মানুষের কাছে এটি মুখরোচক ফল হিসেবে পরিচিত। বাতাবি লেবুকে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- পমেলো, জাবং, শ্যাডক,তরুনজা ইত্যাদি। বাতাবি লেবু একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।
লেবুর ইংরেজি নাম Pomilo এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrus Maxima বা Citrus grandis. বাংলাদেশে এই ফলটি বাতাবি লেবুর চাইতে জাম্বুরা নামেই বেশি পরিচিত। তাছাড়া কিছু কিছু এলাকায় এটি ছোলম নামেও পরিচিত। এর ফলটির আদি ভূমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া।
পোস্ট সূচীপত্র
বাতাবি লেবু কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এটি পাকলে হালকা সবুজ বা হলুদ রংয়ের হয়। এর ভেতরের কোয়াগুলো সাদা বা গোলাপী রংয়ের হয়ে থাকে। এর খোসা বেশ পুরু এবং খোসার ভিতরের দিকটা ফোম এর মত নরম হয়। লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে এটি সবথেকে বড়। এটি ১৫-২৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এই ফলটির ওজন ১-২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুন
বাতাবি লেবু অনেক পুষ্টিকর একটি ফল। বাতাবি লেবুর উপকারিতা মূলত এর পুষ্টিগুনের কারণে। এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। প্রতি ১০০ গ্রাম বাতাবি লেবুতে রয়েছে ৩৮ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, প্রোটিন ০.৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৩ গ্রাম, শর্করা ৮.৫ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, থায়ামিন 6০.০৩৪ মিলিগ্রাম, খনিজ লবন ০.২০ গ্রাম, রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২২ মিলিগ্রাম।
আরো পড়ুন: জয়তুন তেলের উপকারিতা । জয়তুন তেল সৌন্দর্য ও সুস্থতার যোগসূত্র।
এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি২ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১০৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রোগ্রাম, আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২১৬মিলিগ্রাম এবং সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম।
বাতাবি লেবু কখন পাওয়া যায়
বাতাবি লেবু প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। তবে এটি সাধারণত বর্ষাকালে ফলন বেশি হয়। এই ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই পুষ্টিগুনেও ভরপুর। বাতাবি লেবু সাধারনত বর্ষাকালের শেষের দিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের দিকে পাকা শুরু করে। তখন এই ফলটি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায়। এই ফলটি সিলেট ও মৌলভী বাজার এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে।
বাতাবি লেবুর উন্নত জাত সমূহ
বাতাবি লেবুর উপর গবেষণা করে এর কয়েকটি উন্নত চাষ আবিষ্কার করা হয়েছে। নিন্মে এর কিছ আলোচনা করা হলো।
- বারি বাতাবিলেবু-১: এই জাত টি ১৯৯৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতের গাছ খাড়া, পাতা বড় আকারের ও গাঢ় সবুজ বর্ণের। হেক্টর প্রতি এর ফল হয় ১৪-১৬ টন। এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ৯.২%, অম্লতা ১.১৫%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৪৫%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
- বারি বাতাবিলেবু-২: এই জাতটি ১৯৯৭ সালে অনুমোদন করা হয়। এর জাতের গাছ ছাতা আকৃতির, পাতা গাঢ় সবুজ ও ডানাযুুক্ত বৃত্তাকার। হেক্টর প্রতি এর ফলন ১২-১৪ টন। এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ১১.৩৫%, অম্লতা ১.০৫%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৪০%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
- বারি বাতাবিলেবু-৩: এই জাতটি ২০০৩ সালে অবমুক্ত করা হয়। এজাতের গাছ মাঝারি, পাতা গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত ও হৃদপিন্ডকার। হেক্টর প্রতি এর ফলন ২০-৩৫ টন।এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ৮.৬%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৫৫-৬০%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
- বারি বাতাবিলেবু-৪: এই জাতটি ২০০৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছ ছাতা আকৃতির। পাতা গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত বৃত্তাকার।এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ১১.৬০%, অম্লতা .৬০%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৫৫-৬০%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
- বারি বাতাবিলেবু-৫: এই জাতটি ২০১৭ সালে অনুমোদন করা হয়। এজাতের গাছ ছাতা আকৃতির, মাঝারী ও ঝোপালো। পাতা গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত গোলাকার। এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ৯.০৫%, অম্লতা .৫৫%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৬৫-৭০%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
- বারি বাতাবিলেবু-৬: এই জাতের গাছটি ২০১৮ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতের গাছ মাঝারি আকৃতির ও ছড়ানো স্বভাবের। পাতা বড়, গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত, পত্রফলকের অগ্রভাগ সুচাঁলো। হেক্টর প্রতি ১২.৩ টন ফলন হয়।এই জাতটি সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে পাকে। এই জাতের ফলের মিষ্টতা ৮.৫%, অম্লতা .৮০%, তিক্ততা-নেই এবং ভক্ষনযোগ্য অংশ-৫৭%। বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষাবাদ যোগ্য।
বাতাবি লেবুর উপকারিতা
বাতাবি লেবুর উপকারিতা অন্যান্য যেকোন ফলের তুলনায় অনেক বেশি। বাতাবি লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। সেই সাথে এটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। ত্বক থেকে শুরু করে শরীর ও সুস্বাস্থের জন্য এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। নিন্মে এই ফলের উপকারিতা সম্পের্কে আলোচনা করা হলো।
- হৃদপিন্ডের সুস্থতায়: বাতাবি লেবুতে রয়েছে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিক রাখে। আর নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদরোগে উপকারী। বাতাবি লেুব রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে: আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে বাতাবি লেবু আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। বাতাবি লেবুতে রয়েছে ফ্যাট বার্নিং এনজাইম, যা শ্বেতসার ও সুগার শোষন করে ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বাতাবি লেবু ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। বাতাবি লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বায়োফ্যাভোনয়েড যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অতিরিক্ত ইস্টোজেন থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় বাতাবি লেবু ভূমিকা রাখে। প্রটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে বাতাবি লেবু দারুন কার্যকর।
- রক্ত পরিস্কার করতে: বাতাবি লেবু আমাদের রক্ত পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। বাতাবি লেবুতে রয়েছে পেকটিন যা ধমনীর রক্তে মিষে থাকা দূষিত পদার্থকে বের করে দেয়। বাতাবি লেবু রক্তের লোহিত কনিকাকে টক্সিন ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
- হজমে সহায়তা করে: বাতাবি লেবু হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। বাতাবি লেবুর রস অ্যালকালােইন রি অ্যাকশন তৈরি করে আমাদের হজমে সহায়তা করে থাকে।
- দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসায়: দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসায় বাতাবি লেবুর পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাতাবি লেবুর রস দাঁত ও মাড়ির চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী।
- ত্বকের সতেজতায়: বাতাবি লেবু আমাদের ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি করে থাকে। অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে ধমনীর ইলাস্টিক অবস্থা ও দৃঢ়তা রক্ষায় বাতাবি লেবু অত্যন্ত কার্যকর। বাতাবি লেবু অকালে চামড়া কুচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। বাতাবি লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
গরমকালে যে কারণে বাতাবি লেবু খাবেন
গরম কালে ঘাম হয় বেশি। ঘামের সঙ্গে প্রচুর পরিমানে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ফলে এমন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত যাতে বেশি পরিমানে পানি থাকে। বাতাবি লেবু এমনি একটা ফল যাতে পানির পরিমান বেশি থাকে। ফলে শরীরের আদ্রর্তা ধরে রাখে। বাতাবি লেবুতে ভিটামিন সি ও পটাসিয়াম থাকে যা শরীরের রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে তোলে। বাতাবি লেবুর উপকারিতা গরমের সময় বেশি পরিমানে উপলদ্ধ করা যায়।
সাধারনত গরমকালো নান ধরনের রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বাতাবি লেবু খাওয়ার ফলে এসব রোগের প্রকোপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাছাড়া গরমের সময় অনেকের হজমের সমস্যা দেখা যায়। বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমানের ফাইবার থাকায় হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাতাবি লেবুর অপকারিতা
বাতাবি লেুব অনেক উপকারি একটি ফল। এটি সাধারণত নিরাপদ একটি ফল। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। নিন্মে এই ফলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেওয়া হলো:
- গ্যাসের সমস্যা: বাতাবি লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। এর ফলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস বা পেটে ব্যাথার মত সমস্যা হতে পারে।
- চোখের জ্বালা: বাতাবি লেবু কাটার সময় সাবধানে কাটতে হবে। এর খোসার তরল পদার্থ চোখে লাগলে চোখে জ্বালা পোড়া করতে পারে।
- অ্যালার্জি: বাতাবি লেবুর কারণে অনেকের এ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডেইলীবিডিটেক নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url